• ‘যন্ত্র’ বসালেই কমে যাবে বিদ্যুতের বিল, প্রতারণার নয়া ফন্দি বারুইপুরে বাড়ি বাড়ি ঘুরছেন যুবক-যুবতীরা
    বর্তমান | ১৪ মার্চ ২০২৩
  • সত্যজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়, বারুইপুর: দরজায় টোকা পড়তেই খুলে দিলেন গৃহবধূ। দেখলেন, একগাল মিষ্টি হাসি নিয়ে দাঁড়িয়ে এক সুবেশী তরুণী। হাতে ফাইল। বয়স মেরেকেটে বছর পঁচিশেক হবে। ঘরে ঢুকেই ইনিয়ে বিনিয়ে জানতে চান, বিদ্যুতের বিল কত আসে? গৃহবধূ ভেবেছিলেন, হয়তো কোনও সমীক্ষার কাজে এসেছেন এই তরুণী। বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর লিপিবদ্ধ করছিলেন ফাইলের কাগজে। কথা প্রসঙ্গে তিন মাসে ৫ থেকে ৮ হাজার টাকা বিদ্যুতের বিল আসছে শুনেই তরুণী বলেন, করেছেনটা কী! তিন মাসে এত টাকার বিল! বিলের অঙ্ক কি কমিয়ে হাজারের মধ্যে আনতে চাইছেন? যদি চান, তাহলে মিটার বক্সের পাশে একটি ছোট মেশিন বসালেই বিলের অঙ্ক একধাক্কায় অনেকটা কমে আসবে। মেশিনের দাম পড়বে ৫০০ থেকে ৮০০ টাকার মধ্যে।

    একই অভিজ্ঞতা আরেক বাসিন্দা অসীমা মণ্ডলের। তাঁর বাড়িতে তিন মাসে বিল আসে গড়ে চার হাজার টাকা। সেই টাকার পরিমাণ কমানোর টোপ দিয়ে মেশিন বিক্রি করতে এসেছিলেন আরেক তরুণী। তাঁকে আবার বিলের অঙ্ক পাঁচশো টাকার মধ্যে নামিয়ে আনার গল্প ফেঁদেছিলেন তিনি। উদ্দেশ্য একটাই, ৮০০ টাকার মেশিন গছিয়ে দেওয়া। বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার অফিসের সঙ্গে এ নিয়ে তাঁদের কথা হয়ে গিয়েছে বলেও দাবি করেছেন ওই তরুণী। তবে তিনি কোনও পরিচয়পত্র দেখাতে পারেননি। এমনই সব ঘটনা ঘটছে বারুইপুরের বিভিন্ন পাড়ায়। শুধু সুবেশী তরুণী নয়, হ্যান্ডসাম যুবকদেরও এই কাজে লাগানো হয়েছে।  

    বারুইপুরের বাসিন্দা সুপ্রিয় গুহর কথায়, এই চক্রের সঙ্গে মিটার রিডারদের কারও কারও যোগ থাকতে পারে। তাঁদের মদত ছাড়া এই কাজ করা অসম্ভব। বারুইপুরের কয়েকটি ওয়ার্ডের পাশাপাশি পঞ্চায়েত এলাকায় গিয়েও মানুষকে বিভ্রান্ত করে মেশিন বিক্রি করছে চক্রের লোকজন। পরের ত্রৈমাসিক বিল যখন আসছে, তখন দেখা যাচ্ছে, যে কে সেই। বিলের অঙ্কে কোনও পরিবর্তন নেই।

    বিদ্যুতের বিলের অঙ্ক কমানোর কোনও কৌশল এখনও আবিষ্কার হয়নি বলে জানিয়েছেন রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার রিজিওনাল ম্যানেজার নির্মলেন্দু বিশ্বাস। তাঁর কথায়, ছক কষেই কোনও চক্র প্রতারিত করতে চাইছে বিদ্যুৎ গ্রাহকদের। তারা কয়েক মাস ধরেই বারুইপুর জুড়ে সক্রিয়। এই প্রতারকদের থেকে সতর্ক থাকার জন্য প্রতিটি মহকুমায় সচেতনতার বার্তা দিয়ে মাইক প্রচারের কথা বলা হয়েছে। কেউ এদের ফাঁদে পড়লে অবিলম্বে থানাকে জানান। বারুইপুরের বিদ্যুৎ অফিসের এক আধিকারিক বলেন, মেশিন কিনে ঠকে গিয়ে অনেকেই আসছেন আমাদের কাছে। আমরা সবাইকেই বলছি, সংশ্লিষ্ট থানা বা বারুইপুর পুলিস জেলার সাইবার সেলে গিয়ে যোগাযোগ করতে। বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার সঙ্গে এদের কোনও সম্পর্ক নেই।
  • Link to this news (বর্তমান)