• ইলামবাজার সার্বজনীন দুর্গোপুজো
    বর্তমান | ০২ অক্টোবর ২০২২
  • ইন্দ্রজিৎ রায়, বোলপুর: বৈচিত্র্যের মধ্যেই ঐক্য-ভারতের এই ছবিটাই আমাদের চোখের সামনে উঠে আসে। ধর্মীয় উৎসবগুলোয় সবাই আনন্দে মেতে ওঠেন। সেখানে কোনও বিভেদ উঠে আসে না। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে প্রতিটি মানুষ উৎসবের আনন্দে মেতে ওঠেন। এবছর সেই সম্প্রীতির মেলবন্ধনের অনন্য উদাহরণই তুলে ধরেছে ইলামবাজার সর্বজনীন দুর্গাপুজো কমিটি। ৪৫ বছর ধরে এই ক্লাবের দুর্গাপুজোয় শামিল হয়ে আসছেন হিন্দু, মুসলিম ও আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষজন। পুজোর ওই চারদিন গোটা এলাকায় রীতিমতো চাঁদের হাট বসে। 

    ক্লাবের সভাপতি শেখ আবু কালাম বলেন, আগে হাতেগোনা কয়েকটা বনেদিবাড়ি ছাড়া এলাকায় দুর্গাপুজোর আয়োজন হতো না। পাশাপাশি একই পাড়ায় হিন্দু, মুসলিম, আদিবাসী মানুষরা বসবাস করেন। তাই বাঙালির প্রাণের উৎসব দুর্গাপুজো কীভাবে করা যায়, তা নিয়ে ধন্দে ছিলেন অনেকেই। পরে অবশ্য সবাই উৎসবের আনন্দে মেতে উঠতে রাজি হন।

    পুজো কমিটির কোষাধ্যক্ষ রবীন্দ্রনাথ জর ও কাজল সাহা বলেন, ১৯৭৭ সালে দুর্গাপুজো শুরু। তারপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি। শেষ কয়েকবছর ধরে পুজোয় সম্প্রীতির বার্তা তুলে ধরা হয়েছে। পাশাপাশি থিম পুজোও করা হয়েছে। গতবছর রাজ্য সরকারের লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, দুয়ারে সরকার, কন্যাশ্রীর মতো প্রকল্পগুলোকে তুলে ধরা হয়েছিল। এনিয়ে এলাকায় সাড়া পড়ে গিয়েছিল। এবছরও অভিনব থিমের আয়োজন করা হয়েছে। এবার আমাদের উদ্যোগ ‘অরণ্য সম্রাট আদিবাসী জনজাতি’। এছাড়াও প্লাস্টিক বর্জন, সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ, বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ নিয়ে সচেতনতার বার্তা তুলে ধরা হয়েছে। পুজোর দিনগুলোয় সম্প্রীতির আবহাওয়ায় একেবারে মিশে যান স্থানীয় বাসিন্দারা। আট থেকে আশি, সবাই অপেক্ষা করে থাকেন এই চারটে দিনের জন্য। রাজ্যের মন্ত্রী তথা এলাকার বিধায়ক চন্দ্রনাথ সিনহা এই পুজোর প্রধান পৃষ্ঠপোষক। তিনি বলেন, সম্প্রীতি ও সমাজ সচেতনতার বার্তা প্রশংসনীয়ভাবে তুলে ধরেছে এই পুজো কমিটি। মুখ্য উপদেষ্টা দুলালচন্দ্র রায়‌ ও ফজলুর রহমান বলেন, পৃথিবীর পরিবেশ রক্ষায় অরণ্যের ভূমিকা অনস্বীকার্য। সেই কথা মাথায় রেখে সচেতনভাবেই থিম সাজানো হয়েছে। পুজো কমিটির সম্পাদক মহম্মদ মুসা ওরফে শেখ হীরক বলেন, ধর্ম যার যার উৎসব সবার।‌ তাই মানবতার জয়গানে মিলিত হয়ে এই পুজোকে সর্বজনীন রূপ দিতে সক্ষম হয়েছি। গতবছর ‘সেরা প্রতিমা’র শারদ সম্মানে সম্মানিত হয়েছিল আমাদের প্রতিমা। এবারও মা দুর্গার ডাকে মিলিত হয়ে উৎসবে মেতে উঠবে সমাজের সকল স্তরের মানুষ।
  • Link to this news (বর্তমান)