• থিম এবং সাবেকিয়ানার মেলবন্ধনে সেজে উঠছে দিল্লির একাধিক পুজো
    বর্তমান | ০২ অক্টোবর ২০২২
  • দিব্যেন্দু বিশ্বাস, নয়াদিল্লি: বহু বছর আগে বারাণসী থেকে জলপথে প্রতিমা নিয়ে আসতেন উদ্যোক্তারা। পুজো শুরুর তা একেবারে গোড়ার কথা। বর্তমানে অবশ্য কলকাতা থেকে কারিগর আসেন। মণ্ডপেই তৈরি হয় প্রতিমা। কালের নিয়মে অনেক কিছু পরিবর্তিত হয়েছে ঠিকই। কিন্তু প্রতীকী হলেও বেশ কিছু প্রথা এখনও বজায় রেখেছেন দিল্লি দুর্গাপুজো কালচারাল অ্যান্ড চ্যারিটেবল সোসাইটির কর্মকর্তারা। যা কাশ্মীরি গেটের পুজো হিসেবেই খ্যাত। বয়স ১১৩ বছর। অতীতে গোরুর গাড়িতে প্রতিমা চাপিয়ে বিসর্জনে যাওয়া হতো। পায়ে হেঁটেই সামনে পিছনে থাকতেন উদ্যোক্তারা। মেয়েরা পরতেন লাল পাড়, সাদা শাড়ি। ছেলেরা ধুতি-পাঞ্জাবি। থাকতেন সানাইবাদকরাও। কমিটির চেয়ারম্যান সমরেন্দ্র বসু জানালেন, ‘এখন আর তা সম্ভব হয় না। তবে মূল মণ্ডপ থেকে বড় রাস্তা পর্যন্ত এখনও একইভাবে প্রতিমা নিয়ে যাওয়া হয় বিসর্জনের সময়। বড় রাস্তা থেকে ট্রাকে ওঠানো হয়। সাবেকিয়ানার সঙ্গে আমরা কখনও আপোস করি না।’

    করোলবাগ পুজো সমিতির এবার ৮১ বছর। দিল্লির পুরনো পুজোগুলির মধ্যে এটিকে তৃতীয় হিসেবেই ধরা হয়। এবারের থিম স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তি। মণ্ডপ লালকেল্লার আদলে। প্রতিমায় বাগবাজারের পুজোর সাবেকিয়ানার ছোঁয়া। জানিয়েছেন কমিটির সাধারণ সম্পাদক দীপক ভৌমিক। ময়ূরবিহার কালীবাড়ি ফেজ-ওয়ানের এবারের পুজো নজর কাড়ছে অভিনবত্বে। কমিটির সম্পাদক অমিতাভ দত্ত জানালেন, ‘রাষ্ট্র এক, ভাষা অনেক— প্রধানত একে মাথায় রেখেই পুজো হচ্ছে। সরকারি সমস্ত ভাষার অক্ষর ব্যবহার হয়েছে মণ্ডপসজ্জায়। শিল্পী সমিতির সদস্যরা।’ ময়ূরবিহার ফেজ-ওয়ানের ‘মিলনী’র পুজোয় এবারের থিম, বন্দেমাতরম এবং স্বাধীনতার ৭৫ বছর। মণ্ডপের প্রবেশ পথে থাকছে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর সাড়ে দশ ফুটের মূর্তি। কমিটির সাধারণ সম্পাদক মৃণাল বিশ্বাসের দাবি, প্রতিমায় কোনও রং ব্যবহার হয়নি। শুধুমাত্র চোখ এবং ঠোঁট আঁকার ক্ষেত্রে পরিবেশবান্ধব রংয়ের ব্যবহার হয়েছে। দ্বারকা ঐকতান কালীবাড়ি ও সেবা সমিতির পুজো এবার ২১ বছরের। সহ-সভাপতি বাবলু বড়ুয়ার দাবি, দ্বারকার সবথেকে পুরনো পুজো এটিই। প্রতিমা সাবেকি এবং ডাকের সাজের। দ্বারকা কালীবাড়ি পুজো সমিটির সাধারণ সম্পাদক জয়ন্তকুমার ঘোষ জানিয়েছেন, তাঁদের ১৩ বছরের পুজো বরাবরই নিয়মনিষ্ঠা মেনে হয়। 

    জাঁকজমকের ভিড়ে কিংবা সাবেকিয়ানার আভিজাত্যে সেভাবে শামিল না হয়েও অবশ্য স্বকীয়তা হারাচ্ছে না রাজধানীর অন্য বেশ কয়েকটি পুজো। যেমন, গাজিয়াবাদের বৈশালি সেক্টর-তিনের ট্রিপল এসকেপিএসের পুজো। ১৭ বছরে পুজোর থিম ‘বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য’। মণ্ডপে রয়েছে গেটওয়ে অব ইন্ডিয়ার আদল। জানিয়েছেন কমিটির সভাপতি দীপেন্দু ঘোষ। এই পুজোয় নজর কাড়ছে চন্দননগরের আলোকসজ্জাও। ময়ূরবিহার ফেজ-থ্রি’র বঙ্গীয় ঐক্য সম্মিলনীর পুজোয় জোর বাঙালিয়ানার  উপরই। করোনার কারণে দু’বছর বন্ধ থাকার পর এবার ফের পুজোর আয়োজনে ব্যস্ত দিল্লির পটপড়গঞ্জের আইপি এক্সটেনশন পূর্বাচল পুজো সমিতি। ৩২ বছরের পুজোর দায়িত্বে এবার নবীন প্রজন্মই। জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা। দিল্লির পাহাড়গঞ্জের আরামবাগ পুজো সমিতি তাদের ৩৪ বছরে তুলে ধরছে সুন্দরবনের মানুষের বর্তমান পরিস্থিতির ছবি। বাঘের আক্রমণে মারা গিয়েছেন, এমন ১০ জন মানুষের পরিবারকে পুজোয় অংশগ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানাচ্ছে কমিটি। পরিবারের সদস্যদের হাতে ১৫ হাজার টাকা করে তুলে দেওয়া হবে। - নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)