• জামতাড়ার আদলে নয়া গ্যাংয়ের খোঁজ বেলডাঙায় উদ্ধার আড়াই হাজার সিম, গ্রেপ্তার তিন
    বর্তমান | ২২ মার্চ ২০২৩
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, বহরমপুর: প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে জামতাড়া গ্যাংয়ের কায়দায় প্রতারণা চালিয়ে পুলিসের ঘুম উড়িয়েছিল ‘বেলডাঙা গ্যাং’। একের পর এক জালিয়াতি করছিল একদল যুবক। অবশেষে তাদের জালে তুলল পুলিস। বিশেষ অভিযানে নেমে সোমবার রাতে তিন দুষ্কৃতীকে পাকড়াও করে বেলডাঙা থানার পুলিস। ধৃতদের কাছ থেকে ২৬২০টি সিমকার্ড, ২৪টি মোবাইল, ২৫টি এটিএম কার্ড ও ছাপা প্রচুর কিউআর কোড ও বায়োমেট্রিক স্ক্যানার উদ্ধার হয়েছে। ধৃতদের নাম বুরহান শেখ, নূর আলম ও হাবিবুর শেখ। তিনজনের বাড়ি বেলডাঙার মির্জাপুর গ্রামে। ধৃতদের মঙ্গলবার বহরমপুর আদালতে তোলা হলে ছ’দিন পুলিসি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।

    মির্জাপুরের একটি মোবাইল দোকান থেকেই অপারেশন চালানো হতো। ওই দোকানেই বিক্রি হয় বিভিন্ন কোম্পানির সিমকার্ড। নিয়মিত মোবাইলে রিচার্জও করা হয়। কিন্তু ভিতরে চলে জালিয়াতি। কাউকে ব্যাঙ্ক ম্যানেজার পরিচয় দিয়ে ফোন করে অ্যাকাউন্টের তথ্য হাতিয়ে টাকা গায়েব, কাউকে আধার কার্ড ও প্যান লিঙ্ক করার টোপ দিয়ে তথ্য হাতিয়ে ব্ল্যাকমেল করে টাকা উপার্জন করে তারা। কখনও রান্নার গ্যাসের ভর্তুকির টাকা ঢুকছে না বলে ব্যাঙ্ককর্মীর পরিচয় দিয়ে অ্যাকাউন্ট নম্বর হাতিয়ে সেখান থেকে সমস্ত টাকা তুলে নেওয়া হয় বলে অভিযোগ উঠছিল। 

    এই ধরনের জালিয়াতির খবর পেয়েই সোমবার রাতে বেলডাঙার মির্জাপুরের ওই মোবাইলের দোকানে গোপনে অভিযান চালায় পুলিস। সেখান থেকে বিপুল পরিমাণ সিমকার্ড উদ্ধার হয়। এই সিমগুলির অধিকাংশই অন্য বাসিন্দার নামে নথিভুক্ত করা। সেই সিমের মাধ্যমেই ওটিপি নিয়ে চলত জালিয়াতি, এমনটাই জানিয়েছে পুলিস। ধৃতদের কাছ থেকে ২৪টি মোবাইল, ২৫টি এটিএম কার্ড, অনেক ছাপা কিউআর কোড এবং বায়োমেট্রিক স্ক্যানার উদ্ধার হয়েছে। 

    বেলডাঙার এসডিপিও সন্দীপ গড়াই বলেন, মোট ২৬২০টি সিম উদ্ধার করা হয়েছে। এই সিমগুলি অন্য নামে তোলা হয়েছে। বিভিন্ন গেমিং ওয়েবসাইট ও অ্যাপ ব্যবহার করা হয়। এছাড়া শপিং ওয়েবসাইটে ফেক অ্যাকাউন্ট খোলা হয় এই নম্বর দিয়ে। সিমগুলিতে যে ওটিপি আসত, সেগুলি বিভিন্ন হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে বিক্রি করার চেষ্টা করত। বিভিন্নভাবে জালিয়াতি করত তারা। এব্যাপারে তদন্ত চালানো হচ্ছে। এদের পিছনে কারা রয়েছে সেব্যাপারেও খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। 

    সূত্রের খবর, ওই দোকান থেকে সিমকার্ড নেওয়া বাসিন্দাদের আধার নম্বর দিয়েই অন্য সিম তুলে নেওয়া হয়েছে। এমনকী অন্য ব্যক্তির বায়োমেট্রিকও ব্যবহার হয়েছে জাল সিম তোলার জন্য। গ্রামের অনেকেই জানেন না যে তাঁদের নামে ভুয়ো সিম ব্যবহার করে প্রতারণা চালিয়ে মোটা টাকা মুনাফা করছে এই গ্যাংয়ের সদস্যরা। ওই সিম থেকেই কল সেন্টারের মতো ফোন করে মানুষকে বিভ্রান্ত করে তথ্য হাতিয়েছে তারা। 

    বেলডাঙা থানার পুলিস জানিয়েছে, এলাকায় আর কোথাও এরকম মোবাইল দোকানের মাধ্যমে কেউ জালিয়াতি চক্র চালাচ্ছে কিনা সে ব্যাপারেও খোঁজখবর নেওয়া শুরু হয়েছে। এই চক্রের শিকড় বহুদূর বিস্তৃত বলেই মনে করা হচ্ছে। 
  • Link to this news (বর্তমান)