• Anubrata Mondal News Today : জন্মদিন কবে? জিভ বের করে মৃদু হেসে কেষ্ট বচন, 'আমার এখন ৬৪'
    এই সময় | ২২ মার্চ ২০২৩
  • এই সময়, নয়াদিল্লি: একই মামলায় তাঁর একদা ঘনিষ্ঠ দেহরক্ষী, হিসেবরক্ষককে যেতে হয়েছে দিল্লির তিহার জেলে। গোরু পাচার মামলায় ১৪ দিনের ইডি হেফাজত শেষে মঙ্গলবার দিল্লির রাউজ় অ্যাভিনিউ আদালতের নির্দেশে সেই তিহারেই যেতে হলো অনুব্রত মণ্ডল ওরফে কেষ্টকে। বিচারক রঘুবীর সিংয়ের নির্দেশে আপাতত ১৩ দিন জেল হেফাজতেই থাকতে হবে তাঁকে।

    এমনিতে কলকাতা থেকে দিল্লিতে ইডি হেফাজতে যাওয়ার পর জেরা পর্বে কেষ্টকে প্রথমে ভাষাগত সমস্যায় পড়তে হয়েছিল। তদন্তকারী অফিসারদের কেষ্ট বলেন, তিনি হিন্দি বা ইংরেজি বলতে, লিখতে পারেন না। বাংলায় শুধু সইটুকু করতে পারেন। ফলে জেরা পর্বে কেষ্টর জন্য একজন ইন্টারপ্রেটার বা দোভাষীর ব্যবস্থা করতে হয়েছিল।

    তিহার জেলে গেলে সেখানে কোনও সমস্যা হলে তিনি কী ভাবে বোঝাবেন সেখানকার সহবন্দি বা রক্ষীদের- এ দিন রাউজ় অ্যাভিনিউ আদালতে কেষ্টকে হাজির করানো হলে তাঁর আইনজীবীরা সেই সমস্যার কথা উল্লেখ করেন। এর পাশাপাশি তাঁর নানারকম শারীরিক অসুস্থতার বিষয়েও বলা হয়। বিচারকের চেম্বারে অনুব্রত ও ইডি, দু'পক্ষের বক্তব্য শুনে জেলেও কেষ্টর জন্য একজন ইন্টারপ্রেটার রাখার অনুমতি দেওয়া হয়।

    এ দিন তিহার জেলে যাওয়ার আগে পোশাক নিয়েও কিঞ্চিৎ অস্বস্তির মধ্যে পড়তে হয় অনুব্রতকে। গ্রেপ্তার হওয়ার আগে বেশিরভাগ সময়ে তাঁকে দেখা গিয়েছে হাফ হাতা পাঞ্জাবি এবং সাদা পাজামায়। ইডি হেফাজতে দিল্লিতে থাকাকালীনও যে ক'বার সামনে এসেছেন কেষ্ট, তাঁর পরনে ছিল সবুজ কলাপাতা রংয়ের পাঞ্জাবি ও পাজামা।

    সাধারণ ভাবে যে কোনও জেলেই নিরাপত্তার কারণে দড়ি বাঁধা পাজামা বন্দিদের পরতে দেওয়া হয় না। এ দিন এক ইডি আধিকারিক অনুব্রতকে জানান, জেলে কিন্তু ইলাস্টিক যুক্ত পাজামা৷ ম্লান মুখেই কিছুটা হাসি টেনে কেষ্ট বলেন, তেমনই একটি পাজামা পরে আছেন৷ আর এক ইডি আধিকারিক চেয়ারে বসে থাকা কেষ্টর কাছে তাঁর জন্ম তারিখ জানতে চান৷

    এ বারও অনুব্রত জিভ বের করে কিঞ্চিৎ হেসে জানান, জন্ম তারিখ তিনি নিজেই ভুলে গিয়েছেন৷ শেষে আধার কার্ডের নথি থেকে ইডি অফিসাররা জানতে পারেন, অনুব্রতর জন্মদিন হলো ১৯৫৯-এর ১ জানুয়ারি। সেটা শুনে পাশে বসে থাকা ইডির এক কর্মীকে হেসে কেষ্ট বলেন, 'হ্যাঁ, ঠিক। এখন আমার ৬৪ বছর বয়স৷'

    এই কথোপকথনের পর অনুব্রতর ডাক পড়ে বিচারক রঘুবীর সিংয়ের চেম্বারে। সেখানে শুনানি শেষে বেরিয়ে আসার পথে আদালত চত্বরের এককোণে তিনি আলাদা করে কথা বলেন নিজের আইনজীবী সম্পৃক্তা ঘোষালের সঙ্গে৷ কেষ্টকে বলতে শোনা যায়, '২৩ তারিখে (মার্চ) দিল্লি হাইকোর্টে জামিনের আর্জি আছে, দেখে নিও৷' কিছুক্ষণের মধ্যেই দিল্লি পুলিশের প্রিজ়ন ভ্যানে অনুব্রত যখন তিহারের উদ্দেশে রওনা দেন, ততক্ষণে রাজধানীর আকাশে সূর্য ঢলে পড়েছে৷ এই মুহূর্তে তিহার জেলেই রয়েছেন কেষ্টর একদা ঘনিষ্ঠ দেহরক্ষী সেহগল হোসেন ও তাঁর হিসেবরক্ষক মণীশ কোঠারি।

    জেলে কী কী সুযোগসুবিধা পাবেন অনুব্রত?

    এদিন আদালত জানিয়েছে, তিহার জেলে অনুব্রত মণ্ডলের স্বাস্থ্যের দিকে বিশেষ নজর রাখা হবে। সেখানেই তাঁকে ইনসুলিন এবং অন্য প্রয়োজনীয় ওষুধ দেওয়া হবে। জেলের চিকিৎসকরা তাঁর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে প্রেসক্রিপশন দেখে প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র দেবেন। অনুব্রতর শ্বাসকষ্টেরও সমস্যা রয়েছে। আদালতের নির্দেশ, তিহারে থাকাকালীন শ্বাসকষ্ট হলে জেলের চিকিত্‍সকরাই তাঁর জন্য নেবুলাইজ়ার, মাস্ক এবং লিক্যুইড অক্সিজেনের ব্যবস্থা করবেন৷

    কোনও সমস্যা হলে তিনি রাউজ় অ্যাভিনিউ আদালতকে জানাতে পারবেন৷ কেষ্টর আইনজীবী সম্পৃক্তা ঘোষাল জানান, জেলে তাঁর জন্য ওয়েস্টার্ন টয়লেট বা কমোডের ব্যবস্থাও থাকবে। পোশাকের পাশাপাশি পাবেন চপ্পলও। তবে তাৎপর্যপূর্ণ হলো, দিল্লিতে আসা ইস্তক যে ক'বার সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরার মুখোমুখি হয়েছেন কেষ্ট, কোনওবারই রা কাড়েননি তিনি। এ দিনও তাঁকে বেশ কয়েকবার তাঁর স্বাস্থ্য, জেল যাত্রা- এ সব নিয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন। আদালত কক্ষ থেকে বের হয়ে লিফটে ওঠার মুখে একবার সাংবাদিকদের দিকে তাকালেও তিনি কিছু বলেননি।

    এ দিন আদালত কক্ষে ঢুকে চেয়ার বসে সামান্য হাঁফাচ্ছিলেন কেষ্ট। ইডির এক কর্মীর কাছ থেকে জল নিয়ে খান তিনি৷ বিচারক আসার আগে তিনি আইনজীবীকে ডেকে বলেন আসানসোল জেল থেকে দিল্লিতে সঙ্গে নিয়ে আসা চারটি ব্যাগ তিনি কোথায় রাখবেন। আইনজীবী জানান, সেগুলি জেলে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি নেই। উদ্বিগ্ন কেষ্ট আইনজীবীকে প্রশ্ন করেন, 'কোনও ব্যাগ নিতে দেবে না? একটাও না?

    এর মধ্যেই তো আমার মাস্ক, ইনহেলার আছে৷' আইনজীবী জানান, ওষুধ নিয়ে তাঁকে চিন্তা করতে হবে না। তিহারের জেল প্রশাসনই সব ব্যবস্থা করবে৷ আইনজীবী নিজের ফোন নম্বর লিখে অনুব্রতর হাতে তুলে দিয়ে বলেন, কোনও অসুবিধে হলে তাঁকে যেন তিনি ফোন করেন৷
  • Link to this news (এই সময়)