• চা মহল্লার বোনাস: পাহাড়ে এখন দুধ-রক্তের রাজনীতি
    এই সময় | ০২ অক্টোবর ২০২২
  • এই সময়, শিলিগুড়ি: চা শ্রমিকদের বোনাসকে ঘিরে উত্তাপ বাড়ছে পাহাড়ে। একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান বোনাস না-দিয়ে পুজোর মুখে বাগান ছেড়ে চলে যাওয়ায় নিজের শরীরের রক্ত চা গাছে ছড়িয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন হামরো পার্টির নেতা অজয় এডওয়ার্ডস। হ্যাশট্যাগ 'ব্লাড টি' ক্যাম্পেনেও নেমেছেন তিনি। শনিবার পালটা আন্দোলনে নেমেছেন বিজেপি'র দার্জিলিংয়ের বিধায়ক নীরজ জিম্বাও। পাহাড়ের বাগানগুলিতে গিয়ে গঙ্গাজল ও দুধ দিয়ে চা গাছ 'শোধন' করার কাজ শুরু করেছেন তিনি।

    তাঁর যুক্তি, ''বোনাস নিয়ে যে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে সে জন্য দায়ী চা বাগানের মালিকপক্ষ। চা গাছে রক্ত ছড়িয়ে অজয় এডওয়ার্ডস আদতে দার্জিলিং চায়ের সুনাম নষ্ট করতে উদ্যোগী হয়েছেন।'' অজয়ের বিরুদ্ধে 'দেশবিরোধী' কাজের অভিযোগও এনেছেন দার্জিলিংয়ের বিধায়ক। যদিও অজয় এডওয়ার্ডসের পালটা যুক্তি, ''শ্রমিকের রক্ত-ঘাম দিয়েই দার্জিলিং চা তৈরি হয়। সেই শ্রমিকেরা যদি পুজোর সময়ে বোনাস না-পান তাহলে সেই চা'কে ব্লাড টি ছাড়া আর কী বলা যায়? সারা বছর উত্তরবঙ্গের অন্যান্য এলাকার মতোই পাহাড়ের চা বাগানের শ্রমিকেরা মজুরি ছাড়া আর কিছুই পান না। পুজোর সময়ে প্রায় এক মাস ধরে 'দঁশাই', ভাইটিকা সহ নানা উৎসব চলে। মালিকদের দেওয়া এই বোনাসই চা শ্রমিকদের কাছে ছেলেমেয়েদের আবদার মেটানোর একমাত্র উপায়।''

    এই বোনাস নিয়ে এ বার প্রথম থেকেই পাহাড়ে চা বাগান মালিকদের সঙ্গে শ্রমিকদের বিবাদ চলছে। মালিকপক্ষ ১৩ শতাংশের বেশি বোনাস দিতে রাজি হননি। রাজ্য সরকারের হস্তক্ষেপে দুটি পর্যায়ে ২০ শতাংশ বোনাস স্থির হয়। ওই সিদ্ধান্তে চা বাগান মালিকেরা অখুশি হলেও দার্জিলিংয়ের দশটি চা বাগানের মালিক একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজারেরা বাগান ছেড়ে চলে যাওয়ায় ক্ষোভ আরও বাড়ে। সেই সময়ে হামরো পার্টির প্রধানের হ্যাপি ভ্যালি সহ কয়েকটি চা বাগানে গিয়ে শরীরের রক্ত ছড়িয়ে প্রতিবাদ জানানোর কর্মসূচি পাহাড়ের সবমহলেই নিন্দিত হয়েছে। দার্জিলিং চায়ের সুনামের সঙ্গে এমন ছেলেখেলার পিছনে স্রেফ 'রাজনৈতিক' মনোবাঞ্ছা পূরণের তাগিদ ছিল বলে অভিযোগ তুলেছেন ট্রেড ইউনিয়নের নেতারাও।

    এ বার বিজেপি বিধায়কের পালটা গঙ্গাজল ছড়ানোর কর্মসূচিও ঘোলা জলে মাছ ধরার চেষ্টা বলেই সমালোচিত হচ্ছে। নীরজ জিম্বার কথায়, ''কে, কী বলছেন জানি না। অজয় যেটা করেছেন সেটা দেশবিরোধী কাজ। দার্জিলিং চায়ের বদনাম করার চেষ্টা করছেন তিনি। সেই জন্যই দার্জিলিং চায়ের শুদ্ধিকরণের কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।''

    চা বাগানগুলি জিটিএ'র অধীনে না-থাকলেও অনীত থাপা সমস্যা মেটাতে উদ্যোগী হয়েছেন। শনিবার কাঞ্চনভিউ চা বাগান কর্তৃপক্ষ ছাড়াও ওই ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান দশটি চা বাগানের শ্রমিকদের বোনাস মিটিয়ে দিতে রাজি হয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। অনীত থাপা বলেন, ''অশান্তি সৃষ্টি করে পাহাড়ের কোনও সমস্যার সমাধান করা সম্ভব নয়। আলোচনা মাধ্যমেই সমস্যা মেটাতে হবে। জিটিএ'র পক্ষ থেকে সেই কাজই করছি।'' গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার নেতা বিমল গুরুং অবশ্য এই বিষয়ে এখনও চুপচাপই রয়েছেন। তিনি শ্রমিকদের বোনাস দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করার পাশাপাশি পাহাড়ে শান্তি বজার রাখার আবেদন জানিয়েছেন।
  • Link to this news (এই সময়)