• BJP : সমালোচনা শুনে নেতারা চুপ কেন, তীব্র ক্ষোভ বিজেপিতে
    এই সময় | ২৪ মার্চ ২০২৩
  • অরিন্দম বন্দ্যোপাধ্যায় নয়াদিল্লি

    বিরোধী শিবির বারবার অভিযোগ করছে, গোটা দেশে অসহিষ্ণুতার পরিবেশ। সরকারের বিরুদ্ধে মুখ খোলা যাচ্ছে না। সংসদ অচল করে রাখা হয়েছে৷ প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ শিল্পপতি আর্থিক কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত, তা জানার পরেও তাঁর বিরুদ্ধে কোনও তদন্ত নেই। সরকারের সমালোচনা করলেই মিলছে দেশদ্রোহীর তকমা। সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব করা হচ্ছে যথেচ্ছ ভাবে৷

    এই আবহে মোদী সরকারের অস্বস্তি কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিল সর্বভারতীয় একটি সংবাদমাধ্যমের পুরস্কার বিতরণী মঞ্চ। যেখানে মঞ্চে দাঁড়িয়ে দেশের প্রধান বিচারপতির সামনে কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকার তীব্র সমালোচনা করলেন ওই সংবাদমাধ্যমের এক প্রতিনিধি। বিরোধী সাংসদদের উল্লাসের মাঝে দর্শকাসনে বসে সেই সমালোচনা নীরবে শুনলেন সরকার ও শাসক দলের প্রতিনিধিরা৷

    চাঞ্চল্যকর এই ঘটনার জেরে অসন্তোষ তীব্র হয়েছে বিজেপির অন্দরে। যেখানে দলের সাংসদ, কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের ভূমিকাকে আতসকাচের তলায় ফেলেছেন বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব-এমনই দাবি নয়াদিল্লির দলীয় সূত্রে৷ প্রশ্ন তোলা হচ্ছে, প্রকাশ্য মঞ্চে যখন সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব করা নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে তুলোধোনা করা হচ্ছে, প্রশ্ন তোলা হচ্ছে সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে, তখন কেন চুপ থাকলেন উপস্থিত কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও সাংসদরা?

    কেন তাঁরা বক্তাকে থামিয়ে প্রতিবাদ করলেন না? নয়াদিল্লিতে দলীয় সূত্রের দাবি, দলের শীর্ষস্তর থেকে বুধবারের ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর, সাংসদ অনিল বালুনি, সঞ্জয় জওসওয়াল, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদদের এ নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছে৷ দলের শীর্ষ নেতাদের ক্ষোভ আরও বেড়েছে ওই ভিডিয়ো ক্লিপ ভাইরাল হওয়ায়।

    যেখানে দেখা যাচ্ছে, ওই বক্তব্যেকে সমর্থন করে বিরোধী শিবিরের সাংসদ ডেরেক ও ব্রায়েন, সঞ্জয় সিং, মণীশ তিওয়ারিরা তুমুল হাততালি দিচ্ছেন। আর মুখ চুন করে বসে আছেন অনুরাগ ঠাকুর, সঞ্জয় জয়সওয়াল, রবিশঙ্কর প্রসাদরা৷ পুরো ঘটনাটাই ঘটেছে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের সামনে। যাঁকে ধ্রুবতারা হিসেবে তুলে ধরেছেন ওই বক্তা৷ মোদী সরকারকে কাঠগড়ায় তুলে ওই বক্তা বলেন, 'এখানে সিলবন্ধ খামে কিছুই বলা হবে না৷

    আমরা যে সময়ে বাস করছি, সেখানে ভোট অফ থ্যাঙ্কস নেই, আছে শুধুই ভোট৷ ধন্যবাদ প্রধান বিচারপতিকে। আপনি যে ভাবে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য সওয়াল করেছেন, তার জন্য আমরা কৃতজ্ঞ৷ এ ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের ভূমিকা হবে ধ্রুবতারার মতো, যা আমাদের পথ দেখাবে৷'

    এই বক্তব্যের রেশ ধরেই তাঁর সংযোজন, 'যখন আলো কমে আসে, যখন একজন সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করা হয় জঙ্গিদের জন্য নির্ধারিত আইনে, যখন একজন সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করা হয় প্রশ্ন তোলার জন্য, যখন একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপককে গ্রেপ্তার করা হয় কার্টুন শেয়ারের জন্য, কলেজ ছাত্রকে তাঁর ভাষণের জন্য, একজন অভিনেতাকে তাঁর মন্তব্যের জন্য, যখন একটি প্রতিবেদনের রিজয়েন্ডার দেওয়া হয় পুলিশ এফআইআরে, তখন আমরা সবাই তাকিয়ে থাকি ধ্রুবতারার দিকে৷ মনে রাখতে হবে ফ্রিডম অফ স্পিচ এবং ফ্রিডম অফ থট, দুটোই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷'

    সম্প্রতি জম্মু-কাশ্মীরের সাংবাদিক ইরফান মেহরাজকে গ্রেফতার করা হয়েছে ইউএপিএ আইনে৷ তার আগে সিদ্দিক কাপ্পানের গ্রেপ্তারি। মঞ্চ থেকে বক্তা এই দু'টি ঘটনারই উল্লেখ করেছেন, কারও নাম না করেই৷ তুলে ধরা হয়েছে শীর্ষ আদালত, বিশেষত প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের ইতিবাচক ভূমিকাকে। যিনি বারবার সোচ্চার হয়েছেন সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার পক্ষে। অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড় বলেন, 'ক্ষমতাসীন প্রতিষ্ঠানকে কঠিন প্রশ্ন করবেন সাংবাদিকরা, সেটাই তো প্রকৃত গণতন্ত্র৷ সংবাদমাধ্যমকে প্রশ্ন করতে বাধা দেওয়া হলে, বুঝতে হবে গণতন্ত্রের স্বকীয়তা নষ্ট হচ্ছে৷'
  • Link to this news (এই সময়)