• OMR Sheet : প্রায় ৮ হাজার ওএমআর বিকৃতিতেও কি নীলাদ্রি?
    এই সময় | ২৬ মার্চ ২০২৩
  • এই সময়: এসএসসির নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় শুক্রবার সিবিআই গ্রেপ্তার করেছে ওএমআর শিট প্রস্তুতকারী ও মূল্যায়নকারী সংস্থা নাইসার কর্তা নীলাদ্রি দাসকে। তবে তার আগেই অন্য একটি প্রতারণা ও জালিয়াতির মামলায় নীলাদ্রিকে গ্রেপ্তার করেছিল রাজ্য সিআইডি। সিআইডি সূত্রের খবর, পূর্ব মেদিনীপুরের পটাশপুরের একটি মামলায় তাঁকে ২০১৯ এর মার্চ মাসে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তিনি জামিন চেয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। সেখান থেকে জামিন পান নীলাদ্রি।

    সিবিআই সূত্রের অবশ্য দাবি, এসএসসির নিয়োগ দুর্নীতির ষড়যন্ত্রে নীলাদ্রি যুক্ত হন সিআইডির হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার আগেই। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে খবর, ২০১৪-১৫ সালের পর এসএসসি এবং রাজ্যের শিক্ষা দপ্তরের কর্তাদের একাংশের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ আঁতাঁত তৈরি হয়। টাকার বিনিময়ে ওএমআর শিট বিকৃত করেছিলেন তিনি।

    গ্রুপ-সি মামলায় নীলাদ্রিকে গ্রেপ্তার করা হলেও, শিক্ষা দপ্তরের অন্যান্য বিভাগের পরীক্ষার ওএমআর শিট কারচুপিতেও যোগ পাওয়া গিয়েছে তাঁর। জানা গিয়েছে, প্রায় ৮ হাজার ওএমআর শিট বিকৃতির সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারেন নীলাদ্রি। এ বিষয়ে নিজাম প্যালেসে তাঁকে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। এদিন নাইসার এক কর্মীকেও কলকাতায় নিজাম প্যালেসে তলব করেন তদন্তকারীরা।

    গাজিয়াবাদের ওএমআর শিট প্রস্তুতকারী সংস্থা 'নাইসা'-এর ডিরেক্টর পদে ছিলেন নীলাদ্রি। পরবর্তী সময়ে ভাইস প্রেসিডেন্ট হন। সে কারণে সংস্থার সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া থেকে শুরু করে গোপন তথ্য তাঁরই হাতের মুঠোয় ছিল। সিবিআই সূত্রে খবর, এসএসসি-র প্রাক্তন চেয়ারম্যান সুবীরেশ ভট্টাচার্যের সঙ্গে প্রথমে নীলাদ্রির ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ তৈরি হয়। পরে উপদেষ্টা কমিটির প্রাক্তন প্রধান শান্তিপ্রসাদ সিনহার সঙ্গেও আঁতাঁত গড়ে ওঠে। এই দু'জনের নির্দেশেই মূলত নীলাদ্রি ওএমআর শিট বিকৃত করতেন বলে অভিযোগ।

    কী ভাবে এই চক্র কাজ করত? প্রথমে যাঁরা টাকার বিনিময়ে চাকরি পেতে ইচ্ছুক, তার একটি তালিকা তৈরি করতেন শিক্ষা দপ্তরের অভিযুক্ত কর্তারা। সেই তালিকা চলে যেত নীলাদ্রির কাছে। তাঁদের মধ্যে যিনি উত্তরপত্র বা ওএমআর শিট আঁচড় না-কেটে জমা করতেন অথবা তিন-চারটে প্রশ্নের উত্তর দিতেন, পরবর্তী ক্ষেত্রে উত্তরপত্র মূল্যায়নের সময়ে সেই ব্যক্তিই ৫০-৬০ নম্বর পেয়ে যেতেন।

    এ বিষয়ে আরও তথ্য পেতে শান্তিপ্রসাদের সঙ্গে নীলাদ্রির মুখোমুখিও জেরা করা হতে পারে। আগামী সোমবার পর্যন্ত শান্তিপ্রসাদ সিবিআই হেফাজতেই রয়েছেন। সিবিআইয়ের একটি সূত্রে খবর, গ্রুপ-সি মামলায় ৩৪৮১ ওএমআর শিট, গ্রুপ-ডি মামলায় ২৮২৩টি, নবম-দশমে ৯৫২ এবং একাদশ-দ্বাদশ ৯০৭টি ওএমআর শিট বা উত্তরপত্র বিকৃতি করা হয়েছে। এ বিষয়ে শনিবার নীলাদ্রিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।

    সিবিআই সূত্রের খবর, ওএমআর শিট কারচুপির জন্য নীলাদ্রি কোম্পানির অন্দরেই আলাদা দল তৈরি করেছিলেন। তাঁরা ওএমআর শিট বিকৃতির বিষয়ের দায়িত্বে ছিলেন। এই দলে কে কে ছিলেন, তার একটি তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। উত্তর ২৪ পরগনার বরাহনগরের বাসিন্দা নীলাদ্রি ২০০২ সালে দিল্লিতে পাকাপাকি থাকা শুরু করেন। বিভিন্ন সাক্ষী এবং অভিযুক্তদের জেরা করে গোয়েন্দাদের অনুমান, নীলাদ্রির সঙ্গে শিক্ষা কর্তাদের আনুমানিক ১ কোটি টাকারও বেশি লেনদেন হয়েছে।
  • Link to this news (এই সময়)