বাংলা কবিতা

  • উটপাখি
    - সুধীন্দ্রনাথ দত্ত
  • আমার কথা কি শুনতে পাও না তুমি? 
    কেন মুখ গুঁজে আছো তবে মিছে ছলে? 
    কোথায় লুকোবে ? ধু-ধু করে মরুভূমি; 
    ক্ষ'য়ে-ক্ষ'য়ে ছায়া ম'রে গেছে পদতলে। 
    আজ দিগন্তে মরীচিকাও যে নেই; 
    নির্বাক, নীল, নির্মম মহাকাশ। 
    নিষাদের মন মায়ামৃগে ম'জে নেই; 
    তুমি বিনা তার সমুহ সর্বনাশ । 
    কোথায় পালাবে? ছুটবে বা আর কত? 
    উদাসীন বালি ঢাকবে না পদরেখা। 
    প্রাকপুরাণিক বাল্যবন্ধু যত 
    বিগত সবাই, তুমি অসহায় একা। 
     
    ফাটা ডিমে আর তা দিয়ে কী ফল পাবে? 
    মনস্তাপেও লাগবে না ওতে জোড়া। 
    অখিল ক্ষুধায় শেষে কি নিজেকে খাবে? 
    কেবল শূণ্যে চলবে না আগাগোড়া। 
    তার চেয়ে আজ আমার যুক্তি মানো, 
    সিকতাসাগরে সাধের তরণী হও; 
    মরুদ্বীপের খবর তুমিই জানো, 
    তুমি তো কখনো বিপদপ্রাজ্ঞ নও। 
    নব সংসার পাতি গে আবার, চলো 
    যে-কোনো নিভৃত কণ্টকাবৃত বনে। 
    মিলবে সেখানে অনন্ত নোনা জলও, 
    খসবে খেজুর মাটির আকর্শনে। 
     
    কল্পলতার বেড়ার আড়ালে সেথা 
    গ'ড়ে তুলবো না লোহার চিড়িয়াখানা; 
    ডেকে আনবো না হাজার হাজার ক্রেতা 
    ছাঁটতে তোমার অনাবশ্যক ডানা। 
    ভূমিতে ছড়ালে অকারি পালকগুলি 
    শ্রমণশোভন বীজন বানাবো তাতে; 
    উধাও তাহার উড্ডীন পদধূলি 
    পুঙ্খে পুঙ্খে খুঁজবো না অমারাতে। 
    তোমার নিবিদে বাজাবো না ঝুমঝুমি, 
    নির্বোধ লোভে যাবে না ভাবনা মিশে; 
    সে-পাড়াজুড়ানো বুলবুলি নও তুমি 
    বর্গীর ধান খায় সে উনতিরিশে। 
     
    আমি জানি এই ধ্বংসের দায়ভাগে 
    আমরা দুজনে সমান অংশিদার 
    অপরে পাওনা আদায় করেছে আগে, 
    আমাদের 'পরে দেনা শোধবার ভার। 
    তাই অসহ্য লাগে ও-আত্মরতি। 
    অন্ধ হ'লে কি প্রলয় বন্ধ থাকে? 
    আমাকে এড়িয়ে বাড়াও নিজেরই ক্ষতি। 
    ভ্রান্তিবিলাস সাজেনা দুর্বিপাকে। 
    অতএব এসো আমরা সন্ধি ক'রে 
    প্রত্যুপকারে বিরোধী স্বার্থ সাধি : 
    তুমি নিয়ে চল আমাকে লোকোত্তরে, 
    তোমাকে বন্ধু আমি লোকায়তে বাঁধি।