বাংলা কবিতা

  • টেলিভিশন
    - অংশুমান কর
  • ১৯৮৬

    মারাদোনার খেলা দেখার জন্য আমাদের বাড়িতে প্রথম কোনার্কের ব্ল্যাক অ্যান্ড 

    হোয়াইট, বড়, একটি টেলিভিশন কেনা হয়। প্রথম যেদিন টিভি আসে, পাড়ার 

    পনেরো-কুড়িজনকে নেমতন্ন করা হয়, পায়েস হয়, লুচি হয় - সব্বাই গোল 

    হয়ে বসে 'পল্লীকথা' দেখে - শাশ্বতী-চৈতালীকে চেনে। প্রামাণিক কাকিমা 

    বলেন, 'বুঝলেন ওরা হল দুই বোন'। বেশ কিছুদিন পাড়ার সবাই বিশ্বাস করত 

    ওরা দুই বোন। 


    ১৯৯৫

    বাবা-মা, আমরা দুই ভাই তখন পুরুলিয়ায়। বন্ধুদের প্রত্যেকের কালার টিভি। 

    তাই আমাদেরও কালার টিভি (তবে পোর্টেবেল) কেনা হয়। ঘর ভর্তি হয়ে যায় 

    রঙে। আমাদের সিনেমা যাওয়া কমে যায়।  শাশ্বতী-চৈতালীকে ভুলে আমরা 

    চিনে যাই অন্নুকপুর আর রেনুকা সাহানাকে। প্রথম বে-ওয়াচ দেখে আমার চোখ 

    অন্ধ হয়ে যায়। তবে ওই টিভির কোম্পানির নাম মনে নেই কেননা অল্প 

    কিছুদিনের মধ্যেই ওটা বিক্রি করা হয়।  



    ১৯৯৬

    বিপিএল। বড়। কালার। কেনা হলে, প্রথম আমার মনে হয় আমরাও 

    বড়লোকদের মতো হয়ে উঠছি ক্রমশ। সৌরভের সেঞ্চুরি দেখি, অ্যানাইডার 

    অ্যালবাম দেখি, স্টার মুভিজের ফিল্ম। মা নানারকম সিরিয়ালের পোকা হয়ে 

    ওঠে। বাবা শুধু ক্রিকেট আর জি সিনেমায় পুরোনো - ষাট-সত্তরের - হিন্দি 

    সিনেমা, যাতে হেভি মারদাঙ্গা।  


    ২০০০

    বাবা মারা যায় 


    ২০০৩

    সেই ১৯৯৬-এর বিপিএল-ই আজও। উনপঞ্চাশটা চ্যানেল। ভাই বলে, এই 

    মডেল আর চলে না, জানিস কত কত চ্যানেল আমরা দেখতে পাই না?' আজ 

    সাতদিন ভাই নেই, তিন্নি নেই, সোমা নেই - বাড়িতে মা, আমি, কাজের মেয়ে 

    আশা। দুপুরে বাড়ি ফিরে দেখি - সেলাই করছে মা আর টিভি চলছে নিজের 

    মতো। 'না দেখলে, বন্ধ রাখতে পারো না?' 'আসলে কী জানিস, ফাঁকা ঘর, 

    তোরাও থাকিস না - ওই তো আমার একমাত্র বন্ধু - চললে মনে হয় একটা 

    কেউ আছে, কথা বলছে - অন্তত আমি একা না'