বাংলা কবিতা

  • বনলতা সেন
    - জীবনানন্দ দাশ
  • হাজার বছর ধরে আমি পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে,
    সিংহল সমুদ্র থেকে নিশীথের অন্ধকারে মালয় সাগরে
    অনেক ঘুরেছি আমি; বিম্বিসার অশোকের ধূসর জগতে
    সেখানে ছিলাম আমি; আরো দূর অন্ধকারে বিদর্ভ নগরে;
    আমি ক্লান্ত প্রাণ এক, চারিদিকে জীবনের সমুদ্র সফেন,
    আমারে দুদণ্ড শান্তি দিয়েছিলো নাটোরের বনলতা সেন।
     
    চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা,
    মুখ তার শ্রাবস্তীর কারুকার্য; অতিদূর সমুদ্রের ’পর
    হাল ভেঙে যে নাবিক হারায়েছে দিশা
    সবুজ ঘাসের দেশ যখন সে চোখে দেখে দারুচিনি-দ্বীপের ভিতর,
    তেমনি দেখেছি তারে অন্ধকারে; বলেছে সে , ‘এতোদিন কোথায় ছিলেন?’
    পাখির নীড়ের মত চোখ তুলে নাটোরের বনলতা সেন।
     
    সমস্ত দিনের শেষে শিশিরের শব্দের মতন
    সন্ধ্যা আসে; ডানার রৌদ্রের গন্ধ মুছে ফেলে চিল;
    পৃথিবীর সব রঙ নিভে গেলে পাণ্ডুলিপি করে আয়োজন
    তখন গল্পের তরে জোনাকির রঙে ঝিলমিল;
    সব পাখি ঘরে আসে - সব নদী; ফুরায় জীবনের সব লেনদেন;
    থাকে শুধু অন্ধকার, মুখোমুখি বসিবার বনলতা সেন।