বাংলা কবিতা

  • মেটামরফসিস
    - শ্রীজাত
  • মুশকিলটা হল এই যে, মদন আজ সকল থেকে আর কথা
    বলছে না।  এক্কেবারে চুপ মেরে গেছে।  পাড়ার রোযাকে বসে 
    কুকুরদের বিস্কুট খাওয়াচ্ছে, পাখি-ফাখি দেখছে, কিন্তু না। 
    কথা বলছে না। প্রথম-প্রথম কেউ কেয়ার করেনি। কিন্তু যখন 
    দেখা গেল, শর্টরান থেকে পোখরান, যে-কোনও ছোট ও বড় 
    বিষয়ে যে-মদন অক্লান্ত ও সুচিন্তিত মতামত পেশ করত,
    সে বেলা গড়িয়ে যাবার পরেও মুখ খুলছে না, পাড়ায় তখন 
    কানাঘুষো শুরু হল। গুটি গুটি লোক জমতে শুরু করল
    উদাস, ভাবহীন মদনের সামনে। কেউ বলল, - 'প্রেমে শক 
    পেয়েছে...', কেউ বলল - 'অতিরিক্ত চিন্তার ফল...' এই সব।  
    কিন্তু অত লোককে সামনে দেখেও মদন যখন রা কাড়ল না,
    সকলে মিলে তাকে কথা বলাবার বিভিন্ন প্রকার চেষ্টায় রত হল।  
    কেষ্টা বলল - 'কী রে মদনা, চা চলবে নাকি?' মদন চুপ।  
    দেবুদা বলল - 'ওই দ্যাখ মিতালি আসছে - ' মদন 
    চুপ।  নিধু একটু বেশি ঝুঁকি নিয়ে বলল - 'এ-এ বাবা,
    মদন বেজন্মা - আ - ' মদন চুপ।  মদন চুপ, চুপ, চুপ
    চুপ, চুপ।  এরপর লোকজন খেপতে শুরু করল, প্রথমে
    কাঁচা খিস্তি, তারপর জামাকাপড় ধরে টানাটানি, শেষে 
    থুতু ছোঁড়া... আর এখন, এই সন্ধের দিকে অবস্থা এমন 
    দাঁড়িয়েছে যে, প্রায় শ'খানেক বাচ্চা-বুড়ো মদনের পায়ের 
    কাছে বসে চুল ছিঁড়ছে, কাঁদছে, আছাড়ি-পিছাড়ি যাচ্ছে - 
    ওদিকে মদন শুধু কুকুরদের বিস্কুট খাওয়াচ্ছে আর পাখি 
    গুনছে তো গুনছেই...