ট্রাফিক সিগন্যাল অমান্য করে ওভারটেকের চেষ্টা, ডাম্পারের ধাক্কায় মৃত্যু চিকিৎসকের
প্রতিদিন | ২৪ জুন ২০২৪
সম্যক খান, মেদিনীপুর: ট্রাফিক সিগন্যাল লাল দেখে আইন মেনেই সাদা দাগের আগেই বাইক দাঁড় করিয়ে ফেলেছিলেন ষাটোর্ধ্ব চিকিৎসক। সেটাই কাল হল! পিছন থেকে ট্রাফিক সিগন্যাল অমান্য করে বালিবোঝাই একটি ডাম্পার পিষে দিল তাঁকে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু (Death) হল ওই চিকিৎসকের। রবিবার সকালে এমনই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটেছে মেদিনীপুর শহরের উপকন্ঠে খড়গপুর লোকাল থানার অন্তর্গত মাতকাতপুরে ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কে। পুলিশ জানিয়েছে, মৃত ব্যক্তির নাম হরিপদ রাউত, বয়স ৬৭ বছর। বাড়ি মেদিনীপুর শহরের অরবিন্দনগরে। এই ঘটনারই প্রতিবাদে উত্তেজিত জনতা বিক্ষোভে ফেটে পড়ে বেশ কিছুক্ষণ জাতীয় সড়ক অবরোধ করে। দীর্ঘক্ষণ অবরোধের জেরে ব্যাপক যানজট হয় গোটা এলাকায়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
মেদিনীপুর (Medinipur) হোমিওপ্যাথি মেডিক্যাল কলেজের অবসরপ্রাপ্ত চিকিৎসক হরিপদবাবু মেদিনীপুর শহরের অরবিন্দনগরে থাকলেও প্রতি রবিবার তিনি তাঁর গ্রামের বাড়িতে যান। তাঁর গ্রামের বাড়ি পিংলা (Pingla) থানার করকাই গ্রামে। সেখানে বাড়িঘর, চাষবাস দেখভালের পাশাপাশি চেম্বারও করতেন। প্রতি সপ্তাহের মতো রবিবারও তিনি প্রাতঃরাশ সেরে গ্রামের বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশে নিজের বাইক নিয়ে বেরন। সবেমাত্র মেদিনীপুর শহর ছাড়িয়ে বীরেন্দ্র সেতু পেরিয়েছিলেন। ওই সেতুর পরই মাতকাতপুরের মোহনপুরে একটি তিনমাথার মোড় আছে। সেখানে ইলেকট্রনিক সিগন্যালিং ব্যবস্থাও আছে। মোড়ের মাথায় লাল সিগন্যাল (Red Signal)দেখে হরিপদবাবু নির্দিষ্ট জায়গায় দাঁড়িয়ে পড়েন। কে জানত সেটাই কাল হবে তাঁর!
হরিপদবাবু বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই পেছন থেকে একটি বালিবোঝাই ডাম্পার এসে তাঁকে পিছন থেকে ধাক্কা মারে। টেনে নিয়ে চলে যায় অনেকটা! এলাকার লোকজন চিৎকার চেঁচামেচি করলেও চালক কোনও ভ্রূক্ষেপ করেনি। এহেন ঘটনায় মুহূর্তের জন্য কর্তব্য ভুলে হতভম্ব হয়ে যান ট্রাফিক পুলিশও (Traffic Police)। তবে সঙ্গে সঙ্গে এলাকার লোকজন ছুটে গিয়ে ডাম্পারটিকে আটকান। পিষে যাওয়া মানুষটিকে উদ্ধার করে বাঁচানোর চেষ্টা করেন।
কিন্তু ততক্ষণে সব শেষ হয়ে গিয়েছে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়েছে ওই চিকিৎসকের। এর পরই উত্তেজিত জনতা ডাম্পার চালককে ধরে মারধর শুরু করেন। পথ অবরোধ করা হয়। মৃত চিকিৎসকের ভাইপো সঞ্জয় রাউত জানাচ্ছেন, ”প্রতি রবিবারই কাকা চেম্বার করার জন্য দেশের বাড়ি যান। এদিনও গিয়েছিলেন। কিন্তু কিছুক্ষণ পরই দুর্ঘটনার (Accident) খবর পেলাম। কাকার কোনও দোষ ছিল না। তিনি ট্রাফিকে রেড সিগন্যাল দেখে আইন মেনে দাঁড়িয়েছিলেন। কিন্তু আইন না মানা বেপরোয়া ডাম্পার চালক তাঁর প্রাণ কেড়ে নিয়েছে।” স্থানীয় বাসিন্দা তথা প্রাক্তন বাম নেতা মিহির পাহাড়ির বক্তব্য, ”প্রতিদিন শয়ে শয়ে ওভারলোডেড বালির লরি, ডাম্পার ওই পথ দিয়ে চলাচল করে। বার বার রাস্তায় বাম্পারের কথা বললেও প্রশাসন কর্ণপাত করেনি। গত দুমাসে ৪ জন এই এলাকায় পথ দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন।”