সুমন করাতি, হুগলি: জমি আন্দোলনের আঁতুরঘর সিঙ্গুরে প্রায় ৩৫ বছর পর সমবায় সমিতি সিপিএমের হাত থেকে ছিনিয়ে নিল তৃণমূল। রবিবার সিঙ্গুর বিধানসভার নসিবপুর অঞ্চলের গোবিন্দপুর সমবায় সমিতির নির্বাচন ছিল। সেখানে মোট ৪৫ আসনেই জয়ী হন তৃণমূল প্রার্থীরা। সিপিএম ও বিজেপি সমবায়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও, তাদের শূন্য হাতে ফিরতে হয়। এদিকে, নন্দীগ্রাম ১ নম্বর ব্লকের হরিপুরের প্রিয়ানগরী সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতি লিমিটেডের পরিচালন সমিতির নির্বাচনে জয় পেল বিজেপি।
টানা ৩৫ বৎসর সিপিএমের দখলে ছিল গোবিন্দপুর সমবায় সমিতি। রবিবার সকাল থেকেই সমবায়ের ভোটকে ঘিরে টানটান উত্তেজনা ছিল। পুলিশি নিরাপত্তা ছিল জোরদার। গোবিন্দপুর সমবায়ের ভোটে এবারে সব আসনে সিপিএম প্রার্থী দিয়েছিল। বিজেপি কিছু আসনে প্রার্থী দিয়েছিল। তবে জয়ের হাসি হাসে তৃণমূল। ভোটের ফলপ্রকাশের পরেই উচ্ছসিত হয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামে জয়ধ্বনি দিতে থাকেন শাসক শিবিরের প্রার্থীরা।
জয়ের কৃতিত্ব সিঙ্গুরবাসীকে দিয়েছেন বিধায়ক বেচারাম মান্না। তিনি বলেন, “প্রায় তিন দশকের বেশি এই সমবায় সিপিএমের দখলে ছিল। ক্ষমতায় থাকার জন্য সিপিএম ও বিজেপি রামধনু জোট করেছিল। কিন্তু সিপিএম পরিচালিত বোর্ডের বিরুদ্ধে স্বজনপোষণ ও দুর্নীতির অভিযোগ ছিল। জনগণ সঠিক বিচার করেই তৃণমূলের হাতে এই বোর্ড তুলে দিল।” যদিও বিজেপির জেলা কমিটির সদস্য সুরেশ সাউ বলেন, “তৃণমূল পুলিশ প্রশাসনকে ব্যবহার করে ছাপ্পা দিয়ে ভোটে জিতেছে।”
এদিকে, নন্দীগ্রাম ১ নম্বর ব্লকের হরিপুরের প্রিয়ানগরী সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতি লিমিটেডের পরিচালন সমিতির নির্বাচনে জয় পেল বিজেপি। ১৯৬৩ সালে তৈরি হওয়া এই সমবায় সমিতিতে প্রথমবার ভোটাভুটি হল। ভোটার রয়েছেন ৬৬০ জন। মোট ১২টি আসনের মধ্যে তৃণমূলে মোটে ১০টি এবং বামেরা ৩টি আসনে প্রার্থী দিয়েছিল। ১১টিতেই জয়ী গেরুয়া শিবির। ভোটের ফলপ্রকাশের পরই বিজয় উৎসবে মাতেন বিজেপি কর্মী-সমর্থকরা। অভিযোগ, সেই সময় দুজন বিজেপি কর্মীকে আটক করে পুলিশ। তা নিয়ে গেরুয়া শিবিরের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তিও বাঁধে। যদিও কী কারণে ধরপাকড়, সে বিষয়ে পুলিশের তরফে কিছু জানানো হয়নি। গেরুয়া শিবিরের দাবি, তৃণমূল ভোটে হেরে যাওয়ায় অতিসক্রিয় হয়ে উঠেছে পুলিশ। সে কারণেই বিজেপি কর্মীদের ধরপাকড় করা হচ্ছে। যদিও সমবায় নির্বাচনে হার নিয়ে মাথা ঘামাতেই নারাজ শাসক শিবির। নন্দীগ্রাম ১ ব্লক তৃণমূল সভাপতি বাপ্পাদিত্য গর্গ বলেন, “এটি অরাজনৈতিক নির্বাচন। এটি সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক নির্বাচন। প্রান্তিক মানুষেরা এখানে টাকার লেনদেন করেন। তাঁরা নিজেদের প্রতিনিধি নির্বাচন করেছেন এই ভোটের মাধ্যমে।” বহিরাগতদের এলাকায় এনে বিজেপি তাণ্ডব করছে বলেও অভিযোগ শাসক দলের।