লাগাতর ধসে ১০ নম্বর জাতীয় সড়কের বেহাল দশা, প্রশ্নের মুখে সেবক-রংপো রেল প্রকল্প?
প্রতিদিন | ২৭ জুন ২০২৪
বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য , শিলিগুড়ি: পাহাড়ের কোল বেয়ে বিছের মতো স্বপ্নের ট্রেন কি নির্ধারিত দিনে পৌঁছবে ভারত-চিন সীমান্তের রাজ্যে? ভূমিধসে বারবার ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক বিধ্বস্ত হওয়ায় এটাই এখন রেলের সামনে কোটি টাকার প্রশ্ন। কারণ, চলতি বছরের ডিসেম্বরে সেবক-রংপো রেলপথ চালুর ডেটলাইন ছিল। ভূমিধসের কারণে সেটা পিছিয়ে হয়েছে ২০২৫ সালের আগস্ট মাস। এর পরও স্বস্তি নেই। যেভাবে ভূমিধস নেমে ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক দফায় দফায় অবরুদ্ধ হয়ে চলেছে তাতে কাজ এগিয়ে নেওয়াই রীতিমতো চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে নির্মাণ সংস্থার সামনে। হয়ত তাই সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী সোমবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক মন্ত্রী নীতিন গড়কড়ির সঙ্গে দেখা করে ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব এনএইচএআই অথবা এনএইচআইডিসিএল-এর মতো জাতীয় সংস্থার হাতে তুলে দেওয়ার আর্জি জানাতে ভোলেননি।
মঙ্গলবার রাতভর ভারী বর্ষণের ধাক্কায় বুধবারও সকাল থেকে ভূমিধস নেমে কয়েক ঘন্টা অবরুদ্ধ ছিল শিলিগুড়ি-সিকিম যোগাযোগের লাইফ লাইন নামে পরিচিত ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক। বর্ষায় প্রতি বছর একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়ে চলেছে। আর তাতেই বিপাকে পড়েছে নির্মাণ সংস্থা ‘ইন্ডিয়ান রেলওয়ে কনস্ট্রাকশন ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড’ (ইরকন)। কারণ, সড়ক পথে শিলিগুড়ি থেকেই নির্মাণ সামগ্রী তাদের পাহাড়ে তুলতে হয়। পরিস্থিতি এমনই দাঁড়িয়েছে যে সম্প্রতি ইরকনের তরফে কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক মন্ত্রক এবং রাজ্য পূর্তদপ্তরকে চিঠি লিখে ১০ নম্বর জাতীয় সড়কে যানবাহন চলাচলে কোনও ব্যাঘাত যেন না ঘটে সেটা নিশ্চিত করার আর্জি জানানো হয়েছে। ইরকনের প্রকল্প পরিচালক মহেন্দ্র সিং জানান, সময় মতো প্রকল্পের কাজ শেষ করতে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা ঠিক থাকা জরুরি। এখানে সেটাই নেই।
২০০৯ সালে চিন সীমান্তের রাজ্য সিকিমকে রেল সূত্রে বাধতে প্রকল্পের সূচনা করেন তৎকালীন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এর পর থেকে হড়পা বান ও ভূমি ধসে প্রকল্পের কাজ বারবার বিঘ্নিত হয়েছে। এছাড়াও ছিল করোনা মহামারির বন্ধ্যা সময়। তাই থমকেছে কাজ। সিকিমের গ্যাংটক থেকে ৩৮ কিলোমিটার এবং পকিয়ং বিমানবন্দর থেকে ২১ কিলোমিটারের মধ্যে রয়েছে সেবক-রংপো রেল প্রকল্প। ৪৫ কিলোমিটার রেলপথে পাঁচটি স্টেশন থাকবে—সেবক, রিয়াং, তিস্তা বাজার, মেল্লি এবং রংপো। এর মধ্যে তিস্তা বাজার স্টেশনটি হবে দেশের প্রথম আন্ডারগ্রাউন্ড রেল স্টেশন। সেইদিক থেকে রেলপথটি পর্যটকদের কাছে খুবই আকর্ষণীয় হতে চলেছে। রেলপথে ১৪টি সুরঙ্গ, ২২টি সেতু এবং দুটি উড়াল পুল থাকছে।
নির্মাণ সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, এখন পর্যন্ত প্রকল্পের প্রায় ৭০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। প্রবল দুর্যোগের মধ্যেও ১১টি সুরঙ্গের কাজ শেষ করা সম্ভব হয়েছে। সেতু, রেলওয়ে ইয়ার্ড ও স্টেশন তৈরির কাজ চলছে। কিন্তু দ্রুতগতিতে কাজ শেষ করার ক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায় হয়েছে হড়পা বান, ভূমিধস। ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরুদ্ধ হতেই বিপদ নামছে রেল প্রকল্পের কাজে। এবছর কয়েক দফায় জাতীয় সড়ক অবরুদ্ধ হওয়ায় প্রয়োজনীয় সামগ্রী সময় মতো পাহাড়ে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। ইরকনের প্রকল্প পরিচালক বলেন, “এভাবে চললে কি নির্দিষ্ট দিনে কাজ শেষ করা সম্ভব হবে!”