ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: অবশেষে কাটল শপথ জট। রাজ্য বিধানসভা বনাম রাজ্যপালের নজিরবিহীন সংঘাতের পর শপথ নিলেন সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রেয়াত হোসেন সরকার। স্পিকারই শপথ বাক্য পাঠ করান তাঁদের। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজভবনের তরফে ডেপুটি স্পিকারকে দুই বিধায়ককে শপথ বাক্য পাঠ করানোর নির্দেশ দেন। তবে ডেপুটি স্পিকারের পরিবর্তে এদিন স্পিকারই তাঁদের শপথ বাক্য পাঠ করালেন।
গত ৪ জুন, লোকসভার পাশাপাশি রাজ্যের ২ বিধানসভা কেন্দ্রের নির্বাচনের ফলপ্রকাশ হয়। বরানগর কেন্দ্রে জয়ী হন সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ভগবানগোলায় রেয়াত হোসেন সরকার। আর তা কেন্দ্র করে বিধানসভা ও রাজ্যপাল নজিরবিহীন সংঘাতের সাক্ষী বাংলা। রাজভবনের তরফে সায়ন্তিকা এবং রেয়াতকে চিঠি পাঠানো হয়। যদিও রেয়াত সেই চিঠি পাননি বলেই দাবি করেন। রাজভবনে গিয়ে শপথবাক্য পাঠে আপত্তি জানান সায়ন্তিকা। পরিবর্তে রাজ্য বিধানসভায় শপথ গ্রহণের আবেদন জানিয়ে একের পর এক চিঠি পাঠান সদ্য জয়ী তারকা বিধায়ক। বার বার রাজ্যপালকে রাজভবনে এসে শপথ বাক্য পাঠ করানোর অনুরোধ করেন স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। এর পর বৃহস্পতিবার ২৪ ঘণ্টার নোটিসে বিধানসভার বিশেষ অধিবেশনের ডাকার কথা জানান। সেই অনুযায়ী শুক্রবার বসে বিধানসভার বিশেষ অধিবেশন।
শুক্রবার বিশেষ অধিবেশনের শুরুতে স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “১৮৮ ধারা অনুযায়ী জয়ী প্রত্যেককে শপথ নিতে হয়। এটাই রীতি যে স্পিকারের সামনে বিধানসভায় শপথ নেন বিধায়করা। কিন্তু এই দুজনের ক্ষেত্রে দেখা গেল রাজভবনে বারবার জানানোর পরও রাজভবন কোনও পদক্ষেপ করলেন না। আমি এখানে অসহায়। শপথ রীতি অনুযায়ী বিধানসভায় হওয়ার কথা। এই দুজনও সেটাই জানান রাজ্যপালকে।” এর পর তিনি আরও বলেন, “এটা দুর্ভাগ্যজনক যে রাজ্যপাল এই দুই বিধায়কের আর্জি শুনে কোনও সিদ্ধান্তই এতদিন ধরে জানাননি। রাজনীতি আর আইন এই বিধানসভায় একসঙ্গে প্রতিফলিত হয়। জনগণের প্রতিনিধি হয়ে সবাই এখানে আসেন। ১৮৮ ধারা অনুযায়ী স্পিকার যেভাবে বলবেন সেভাবে বিধানসভা চলাকালীন শপথ নেওয়ার বিধি আছে। সেখানে স্পিকারের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। আমার অফিস এর মধ্যে একটা চিঠি পেয়েছে। যেখানে ডেপুটি স্পিকারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে শপথ পাঠের। সেটা এসেছে বৃহস্পতিবার রাত ৯টা ২২ মিনিটে।”
এর পর ডেপুটি স্পিকারকে শপথ বাক্য পাঠ করানোর অনুমতি দেন স্পিকার। ডেপুটি স্পিকার শপথ বাক্য পাঠ করাতে অস্বীকার করেন। বলেন, “যে সভায় স্পিকার উপস্থিত আছেন সেখানে আমি শপথ নেওয়ার ধৃষ্টতা বা অসৌজন্য দেখাতে পারব না। আমি অনুরোধ করি আপনি শপথ বাক্য পাঠ করান।” এর পর বিধানসভায় উপস্থিত সকলের সম্মতিতে সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রেয়াত হোসেন সরকারকে শপথ বাক্য পাঠ করান স্পিকার। বাংলাতেই শপথ বাক্য পাঠ করেন দুজনে। বিধানসভায় ওঠে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান। এদিকে, শপথ নেওয়ার সময় বিধানসভার গ্যালারিতে উপস্থিত ছিলেন বরানগরের পুরপ্রধান অপর্ণা মৌলিক এবং অঞ্জন পালরা। শপথ বাক্য পাঠ করার সময় তাঁদের দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়ান সায়ন্তিকা। এদিকে, এদিন বিধানসভার বিশেষ অধিবেশন বয়কট করে বিজেপি।