বন্দুকের বদলে হাতে বই! পিএইচডির যোগ্যতা পরীক্ষায় প্রথম মাও নেতা অর্ণব
প্রতিদিন | ০৬ জুলাই ২০২৪
নিজস্ব সংবাদদাতা, বর্ধমান: ইতিহাস গড়লেন যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত বন্দি অর্ণব দাম ওরফে বিক্রম। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে পিএইচডি করার যোগ্যতা নির্ণায়ক পরীক্ষায় প্রথম হয়েছেন একসময়ের এই মাওবাদী নেতা। অ্যাকাডেমিক স্কোর ও ইন্টারভিউয়ের প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছেন তিনি। তাঁর প্রাপ্ত নম্বর ৭৬.৮৬৭০। দ্বিতীয় স্থানাধিকারী পূজারিনী রায় পেয়েছেন ৭২.৪১১০। অনেকটা বেশি নম্বর অর্ণবের।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সৈয়দ তনভির নাসরিন বলেন, “খুবই মেধাবী অর্ণব। আমাদের বিভাগে গবেষণা করার সুযোগ পাচ্ছেন। পিইচডিতে ভর্তির ১০০ নম্বরের মধ্যে ৭০ শতাংশ অ্যাকাডেমিক স্কোর থেকে হয়। আর ইন্টারভিউতে থাকে ৩০ নম্বর। সব মিলিয়ে অর্ণব সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছেন। এটা একটা খুবই ভাল দিক। উনি এখানে পিএইচডি করলে সেটা ইতিহাস হয়ে থাকবে।”
গড়িয়ার বাসিন্দা অর্ণব খড়গপুর আইআইটিতে (IIT) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র ছিলেন। কিন্তু মাঝপথেই পড়াশোনা ছেড়ে নিরুদ্দেশ হয়ে যান। বেশ কয়েকবছর পর মাওবাদী নেতা হিসেবে উত্থান ঘটে অর্ণবের। নাম হয় বিক্রম। মাও নেতা কিষেনজির অত্যন্ত স্নেহের পাত্র ছিলেন। শিলদা ইএফআর ক্যাম্পে হামলা-সহ একাধিক মাওবাদী হামলায় অভিযুক্ত হয়েছেন অর্ণব। ২০১২ সালে আসানসোলে (Asansol) পুলিশের হাতে ধরা পড়েন তিনি। যাবজ্জীবন সাজাও হয় তাঁর। সংশোধনাগার থেকেই ফের পড়াশোনা শুরু করেন অর্ণব। মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করেন তিনি। সবেতেই ফার্স্ট ক্লাস পেয়েছেন। বর্তমানে হুগলি সংশোধনাগারে বন্দি রয়েছেন তিনি। প্রায় ৪০ বছর বয়সে সেট পরীক্ষা পাশ করেছেন। ইতিহাসে গবেষণা করতে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞপ্তি দেখে আবেদন জানান তিনি।
গত ২৬ জুন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলাপবাগ ক্যাম্পাসে ইতিহাস বিভাগে এসে মৌখিক পরীক্ষা দিয়েছিলেন অর্ণব। শুক্রবার ফলপ্রকাশের পর জানা যাচ্ছে ২২০ জন আবেদনকারীর মধ্যে সর্বোচ্চ নম্বর অর্ণবের। সংশোধনাগারে এসে অসি ছেড়ে মসি ধরেছিলেন একসময়ের বিক্রম। এবারে ইতিহাস গড়ার প্রতীক্ষা। যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত কোনও বন্দি এই প্রথম হয়তো পিএইচডি করবেন রাজ্যে।