সম্যক খান, মেদিনীপুর: সোমবারই দেশ ছেড়ে সুদূর স্পেনে পাড়ি দিয়েছে ছোট্ট সোম। অজানা এক পরিবারে, নতুনভাবে বেড়ে ওঠার স্বপ্ন নিয়ে দেশ ছেড়েছে সে। মেদিনীপুরের সরকারি হোম বিদ্যাসাগর বালিকা আবাসনে ঠাঁই পাওয়া ছয় বছরের অনাথ শিশুটিকে দত্তক নিয়েছেন স্পেনের সিঙ্গেল মাদার মেরিটেক্সেল রোসিচ গিমেজ ওরফে চেরি।
জানা গিয়েছে, এর আগে মেদিনীপুরের এই হোম থেকে আরও পাঁচ শিশু বিদেশে পাড়ি দিয়েছিল। দত্তক নিয়েছেন বিদেশি দম্পতিরা। এবার স্পেনের চেরি ভারতের তথা মেদিনীপুরের হোম থেকে দত্তক নিয়ে গেলেন ছোট্ট শিশুটিকে। মাত্র আড়াই বছর বয়সে খড়গপুর রেল স্টেশন থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল তাকে। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা চাইল্ড লাইন তাকে উদ্ধার করে জেলা প্রশাসনের হাতে তুলে দেয়। সেই থেকে তার ঠাঁই হয় মেদিনীপুরের সরকারি হোমে। নাম রাখা হয় সোম। ওই সরকারি হোমেই তার বেড়ে ওঠা।
এর পর হঠাৎই সোমের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়ে যায় স্পেনের বার্সেলোনার বাসিন্দা চেরির দত্তক নেওয়ার আবেদনে। আন্তর্জাতিক সমস্ত প্রক্রিয়া মেনে বেশ কয়েক মাস আগেই পুত্রসন্তান দত্তক নেওয়ার আবেদন জানিয়েছিলেন চেরি। তিনি সেদেশের সরকারি এক সংস্থায় উচ্চপদে কর্মরত রয়েছেন। তিনি একজন সিঙ্গেল মাদার। তাঁর করা দত্তকের আবেদন ভারতে আসে। সেন্ট্রাল অ্যাডপশন রিসোর্স অথরিটির মাধ্যমে তা এসে পৌঁছয় রাজ্যে। সমস্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পরই এদিন সোমকে চেরির হাতে তুলে দেন জেলাশাসক খুরশিদ আলি কাদরি।
দত্তক সন্তানকে কাছে পেয়ে যারপরনায় খুশি চেরি। তিনি বলেছেন, ‘‘আমার এই সন্তানকে আমি স্প্যানিশ ভাষা শেখাব, পড়াশোনা করাব, মানুষের মতো মানুষ গড়ার চেষ্টা করব।’’ নতুন মাকে পেয়ে খুশি সোমও। নতুন পরিবারে আনন্দে থাকার সাফল্য কামনা করে তার হাতে চকোলেট এবং উপহার সামগ্রী তুলে দেন জেলাশাসক। জেলাশাসকের কথায়, এনিয়ে মেদিনীপুরের সরকারি হোম থেকে মোট ৬২ জন শিশুকে দত্তক নিয়েছেন বিভিন্ন দম্পতি। তাঁদের মধ্যে অনেকেই ভিন রাজ্যের তো কেউ কেউ আবার আমেরিকা, স্পেন, ইটালি, বেলজিয়ামের মতো দেশের দম্পতিও আছেন। তিনি আরও বেশি সংখ্যায় অনাথ শিশুদের দত্তক নেওয়ার আবেদন জানিয়েছেন নিঃসন্তান দম্পতিদের কাছে। কারণ পরিবারের সঙ্গে থাকলে শিশুদের আরও বেশি করে শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ঘটবে।