• সঙ্ঘের আশীর্বাদ, বঙ্গ বিজেপির সভাপতি পদে জগন্নাথ সরকার?
    বর্তমান | ১২ জুলাই ২০২৪
  • রাজু চক্রবর্তী, কলকাতা: বঙ্গ বিজেপির পরবর্তী সভাপতি কে? লোকসভা ভোটে বাংলায় চরম বিপর্যয়ের পর পার্টির সর্বস্তরে এটি সবচেয়ে আলোচিত বিষয়। সাধারণত গেরুয়া শিবিরে এই ধরনের শীর্ষ সাংগঠনিক সিদ্ধান্তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয় রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ (আরএসএস)। তাদের অনুমোদন ক্রমে চূড়ান্ত হয় বিজেপির জাতীয় কিংবা রাজ্য সভাপতির নাম। সেই সূত্র ধরেই এবার পশ্চিমবঙ্গে দলের পরবর্তী সভাপতির দৌড়ে সামনের সারিতে উঠে এসেছেন আরএসএসের আশীর্বাদধন্য রানাঘাটের এমপি জগন্নাথ সরকার। দীর্ঘ ২২ বছর তিনি সঙ্ঘের মহকুমা, জেলা, বিভাগ সহ একাধিক ক্ষেত্রে বিবিধ দায়িত্বে ছিলেন। এমনকী আরএসএসের নির্দেশেই ২০১৩ সালে বিজেপিতে যোগ দেন। ২০১৬ থেকে ২০১৯— তিন বছর দলের রানাঘাট দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি হিসেবে সাফল্যের সঙ্গে কাজ করেছেন জগন্নাথবাবু। ২০১৯ ও ২০২৪ পরপর দু’বার লোকসভা ভোটে পদ্ম প্রতীকে জিতে এমপিও হয়েছেন। মাঝে ২০২১ সালে শান্তিপুর বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী অজয় দে’র মতো দুঁদে রাজনীতিককে পরাজিত করেছিলেন। যদিও বিজেপির ২০০ আসন জয়ের ফানুস মাত্র ৭৭-এ চুপসে যাওয়ায় শেষপর্যন্ত বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দিতে হয়েছিল তাঁকে।


    সঙ্ঘ সূত্রে খবর, গত ৭-৮ জুলাই আরএসএসের সদর দপ্তর নাগপুরে ছিলেন জগন্নাথবাবুর স্ত্রী। তারপরই জগন্নাথবাবুর শান্তিপুরের বাড়িতে এসে দেখা করে যান বাংলার সদ্যপ্রাক্তন এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। দু’দিন আগের সেই ঘটনার পর থেকেই রানাঘাটের বিজেপি এমপির বঙ্গ সভাপতি হওয়ায় জল্পনা চড়তে শুরু করেছে। যদিও দিল্লি বিজেপির এক সূত্রের দাবি, এব্যাপারে আপত্তি রয়েছে বর্তমান রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এবং বিরোধী দলনেতার। দু’জনই সেকথা ঠারেঠোরে বুঝিয়ে দিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে। পার্টির অন্দরে ঠোঁটকাঁটা হিসেবে পরিচিত জগন্নাথ সরকার। দলীয় শৃঙ্খলাকে মাথায় রেখেও তিনি উচিত কথা বলা থেকে পিছপা হন না। একইসঙ্গে কেন্দ্র কিংবা রাজ্যের শীর্ষ নেতাদের তোষামোদ করার দক্ষতাও তাঁর বিশেষ নেই। এই বিষয়গুলি পেশায় স্কুলশিক্ষক জগন্নাথবাবুর বিপক্ষে যাচ্ছে বলে ওয়াকিবহাল মহলের ধারণা। আরএসএসের এক বিশ্বস্ত সূত্রের অবশ্য বক্তব্য, এগুলি গৌণ বিষয়। সঙ্ঘের যাঁকে যোগ্য মনে হবে, পরবর্তী রাজ্য সভাপতি হিসেবে তাঁকেই সমর্থন করবে। যেমনটা হয়েছিল সুকান্ত মজুমদারের ক্ষেত্রে। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে যখন তাঁকে বঙ্গ সভাপতি করা হয়, সেই সময় তাঁর দলীয় কিংবা প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা বিশেষ ছিল না। এক্ষেত্রে তো জগন্নাথবাবু যথেষ্ট অভিজ্ঞ। তাই কারও ‘কান ভাঙানিতে’ এই ধরনের সিদ্ধান্তে বিশেষ পরিবর্তন হবে না।


    বঙ্গ বিজেপি পরবর্তী সভাপতি হিসেবে চর্চায় রয়েছে আরও দু’টি নাম। তাঁরাও লোকসভার সদস্য—আলিপুরদুয়ারের এমপি মনোজ টিগ্গা এবং পুরুলিয়ার এমপি জ্যোতির্ময় সিং মাহাত। মনোজবাবু আদি বিজেপি নেতা। সাংগঠনিক ও পরিষদীয় দলের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব সাফল্যের সঙ্গে সামলেছেন। সঙ্ঘের ‘গুড বুকে’ও রয়েছেন। অন্যদিকে, জ্যোতির্ময় পরপর দু’বার পুরুলিয়া থেকে জিতেছেন। দু’দফায় দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদকও। তবে ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে জেতার আগে জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তেমন সাফল্য নেই। একইভাবে বাংলার থেকেও ঝাড়খণ্ডে সঙ্গে তাঁর নিবিড় যোগাযোগ ঘিরে দলের অন্দরে বিতর্ক রয়েছে। তিনজনের মধ্যে সঙ্ঘ শেষপর্যন্ত কাকে বেছে নেবে? সেই রহস্য ঘনীভূত হচ্ছে।
  • Link to this news (বর্তমান)