সংবাদদাতা, মানিকচক: রাত বাড়লে মাঝেমধ্যেই গ্রামের একটি বাড়িতে আসতেন ‘পুলিস অফিসার’। প্রথম দিকে ততটা গুরুত্ব না দিলেও বাসিন্দারা চোখ বুজে ছিলেন না। সন্দেহ হওয়ায় নিয়মিত নজর রাখছিলেন তাঁরা। মঙ্গলবার গভীর রাতে অবশেষে রহস্যের পর্দা ফাঁস হল। মালদহের পুখুরিয়া থানার লোখরা গ্রামে ‘পুলিস অফিসার’কে বাসিন্দারা উত্তমমধ্যম দেওয়ার পর জানতে পারলেন, তিনি আসলে ভুয়ো। পুখুরিয়া থানার পুলিস অভিযুক্ত আনোয়ার আলিকে গ্রেপ্তার করে বুধবার চাঁচল মহকুমা আদালতে পেশ করে।
পুলিস ও স্থানীয় সূত্রে খবর, মঙ্গলবার রাতে পুলিসের পোশাক পরে বাইকে গ্রামে আসে আনোয়ার। গ্রামের একটি মেয়ের বাড়িতে ঢুকতেই তাকে আটক করেন বাসিন্দারা। জিজ্ঞাসাবাদ করলে প্রথমে নিজেকে পুলিস অফিসার বলে পরিচয় দেয় আনোয়ার। কোন থানায় পোস্টিং জানতে চাইলে বাসিন্দাদের হুমকি দিতে শুরু করে সে। সবাইকে ‘দেখে নেওয়া’র হুমকিও দেয়। ঠিকঠাক জবাব না পেয়ে উত্তেজিত জনতা আনোয়ারকে মারধর করে পুখুরিয়া থানায় খবর দেয়। থানায় নিয়ে গিয়ে পুলিস আনোয়ারকে জিজ্ঞাসাবাদ করতেই উঠে আসে, আসল তথ্য। পুলিস আধিকারিকরা জানতে পারেন, আনোয়ার পুলিস পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন জায়গায় প্রতারণা করে। সে হরিশ্চন্দ্রপুরের বাসিন্দা। বেশ কয়েকবার একই ঘটনা ঘটিয়েছে। মেয়েটির অভিযোগ, মাসছ’য়েক আগে গ্রামের রাস্তায় আনোয়ারের সঙ্গে আলাপ হয়। সেই আমার সঙ্গে পরিচয় করেছিল। তখন পুলিস অফিসার বলে পরিচয় দিয়েছিল। তারপর একাধিকবার দু’জন দেখা করেছি। কিছুদিন পর আমাকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। মাঝেমধ্যে আমাদের বাড়িতে আসত। প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হওয়ায় মোবাইলে অন্তরঙ্গ মুহূর্তের কিছু ছবি তুলেছিল। সেগুলি ফোন থেকে মুছে দেয়নি। গোপন ছবি ফাঁস করে দেওয়ার হুমকি দিয়ে বাবার কাছ থেকে কয়েকবার টাকাও নিয়েছে আনোয়ার। পুখুরিয়ার বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলির কথায়, কাঁধে একটি তারা লাগানো দেখে বুঝেছিলাম এএসআইয়ের পোশাক। সেই পরিচয় দিয়ে গ্রামের একটি মেয়ের সঙ্গে প্রতারণা করে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি করেছিল। মঙ্গলবার রাতে মেয়েটির সঙ্গে দেখা করতে এলে বাসিন্দারা আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। তখনই বোঝা যায় সে ভুয়ো পুলিস। মেয়েটির বাবা বাড়িতে না থাকলেই হাজির হতো অভিযুক্ত। মেয়ের পরিবারের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ হওয়ার পর তদন্ত শুরু হয়েছে। পুখুরিয়া থানার ওসি বাপন দাস বলেন, প্রতারণার অভিযোগ দায়ের করেছে মেয়ের পরিবার। তদন্ত চলছে।