আদিগঙ্গায় ঝাঁপ দিলে কড়কড়ে ১৫০ টাকা, নদী তোলপাড় ১০ যুবকের
বর্তমান | ১৮ জুলাই ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: আদি গঙ্গায় একবার নামলেই ১৫০ টাকা।
প্রতিদিন দুপুরে চুম্বক নিয়ে নদীতে নামেন জনাকয়েক তরুণ। কালীঘাটের গঙ্গার কালো জলে ডুবে থাকেন। ঝুড়ি হাতে পাঁক ঘেঁটে পয়সা ইত্যাদি তোলেন। সংসার খরচের খানিকটা এভাবেই জোগাড় হয়ে যায়। হাতে থাকা দড়ির ডগায় শক্তিশালী চুম্বক বাঁধা। ছিপ ফেলার মতো তা ছুঁড়ে দেন মাঝ নদীতে। চুম্বকে আটকে যায় পয়সা, কাঁসা-পিতলের জিনিসপত্র। সেগুলি তুলে, ধুয়ে কালীঘাটের দোকানে বিক্রি করে দেন। এই তরুণগুলির পেশা আলাদা। গঙ্গায় ঝাঁপ দেন বাড়তি রোজগারের আশায়। কালীঘাটের দেব-মুকেশরা কালো জলে ডুব দেন অক্লেশে। ওঁদের রোগবালাই মোটেও হয় না। গঙ্গার জল দেখতে কালো হলেও ওঁরা বলেন, ‘দূর থেকে দেখলে জল কালো লাগে। কাছ থেকে এসে দেখবেন, গঙ্গা খুবই পরিষ্কার।’ গঙ্গাকে মানুষ যা প্রণামী দিয়ে যান সেগুলির টানেই মুকেশরা গঙ্গায় নামেন। একজন দড়ি ফেলেন। একজন ঝাঁপ দেন নদীতে। চুম্বক ছুঁড়ে দেন ছিপের মতো। তাতে মাছের মতো আটকে যায় পয়সা, পুজোর ধাতব সামগ্রী। তবে চুম্বক শুধু নয়, অনেকে ঝুড়ি নিয়েও নামেন। নদীর তলদেশ ছেঁচে পাঁক তোলেন। সে কাদামাটি ছেঁকে খুঁটে খুঁটে বের করেন পয়সা বা অন্যান্য কিছু। খুব ছোট থেকে এই কাজ করছে দেব। সে স্কুলেও যায়। রোজ স্নান করতে আসে আদি গঙ্গায়। এই ফাঁকে কুড়ুনির কাজও করে নেয়। আদি গঙ্গার কাছাকাছি থাকা জনা দশেক তরুণ এই কাজ করেন। দেব বলে, ‘নদীতে নামলে প্রতিদিন ১৫০ টাকার মতো রোজগার হয়।’ মুকেশ জোগাড়ের কাজ করেন। দুপুরে আর সময় সুযোগ পেলে আদি গঙ্গায় নেমে পড়েন। এ নদীর জল নোংরা নয় মোটেও। কালোও নয়। ওঁদের বক্তব্য, জল এখানকার একদম পরিষ্কার। বাইরে থেকে কালো লাগে। আমরা ছোটবেলা থেকে এখানে নামছি। কোনও সমস্যা হয় না। এতদিনে সবচেয়ে দামি জিনিস ওঁরা কী পেয়েছেন? দেব হাসতে হাসতে বলে, ‘টাকা। ওটা ছাড়া দামি কিছু নেই।’ মুকেশ বলেন, না না! একবার একটা ঠাকুরের মূর্তি পেয়েছিলাম। ওটা বেশ বড় ছিল।’
এ সবের মাঝে সামাজিক কাজকর্মও করে দেন। এক মহিলা এসে জলে ভাসতে থাকা একজনকে একটি বোতল দিয়ে গঙ্গার জল তুলে দিতে বললেন। নদীর মাঝখানের গিয়ে বোতল ভর্তি জল এনে দিলেন ওই তরুণ। মুকেশ তা দেখে বললেন, ‘দেখুন! বোতলের জল কি কালো? কিছুক্ষণ রাখলে খাওয়ার মতো হয়ে যাবে দেখবেন।’ নিজস্ব চিত্র