সাদ্দামের বাড়ির সুড়ঙ্গটি ব্যবহার হতো গুমঘর হিসেবেও, তথ্য পুলিসের হাতে
বর্তমান | ১৯ জুলাই ২০২৪
শুভ্র চট্টোপাধ্যায়, কলকাতা: কুলতলির অপরাধ জগতের বেতাজ বাদশা সাদ্দাম সর্দারের তৈরি করা সুড়ঙ্গ ব্যবহার হতো ‘গুমঘর’ হিসেবে। মুর্তি, সোনা বা ইউরেনিয়ামের টোপ গিলে আসা ব্যক্তিদের এখানে আটকে রেখে চলত টাকা আদায়। সুড়ঙ্গ রহস্যের তদন্তে নেমে এই তথ্য হাতে এসেছে বারুইপুর জেলা পুলিসের। সাদ্দামকে জেরা করে তাঁদের পরিচয় জানার চেষ্টা করবে তারা।সাদ্দামের বাড়িতে তল্লাশিতে চালাতে গিয়ে ঘরের ভিতর সুড়ঙ্গের হদিশ পান তদন্তকারীরা। কেন এটি তৈরি করা হয়েছিল, তার উত্তর খুঁজতে সাদ্দামের সহযোগী আফতাবকে জেরা করা হয়। সে তদন্তকারীদের জানিয়েছে,অনেকদিন ধরে কুলতলির এই মাফিয়া সোনা, দুষ্প্রাপ্য মূর্তি পাইয়ে দেওয়া ও ইউরেনিয়ামের লোভ দেখিয়ে প্রতারণা ব্যবসা চালাচ্ছিল। কাগজে বা বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় বিজ্ঞাপন দেখে কেউ যোগাযোগ করলে তাকে কুলতলিতে আসতে বলত। এরপর বাইকে চাপিয়ে সাদ্দামের লোকজন তাদের পয়তারহাটে নিয়ে যেত। সেখানে হাজির থাকত সাদ্দাম সহ আরও কয়েকজন। তাদের প্রত্যেকের কাছে থাকত আগ্নেয়াস্ত্র। সোনা, মুর্তি বা ইউরেনিয়াম কিনতে আসা ব্যক্তি ঘরের ভিতর ঢোকামাত্র মাথায় বন্দুক ধরত বাদশার লোকজন। তারপর সবকিছু কেড়ে নিয়ে চলত মারধর। এরপর তাঁদের হাত-পা, মুখ বেঁধে ওই সুড়ঙ্গের ভিতর ঢুকিয়ে দিত কুখ্যাত এই অপরাধী। তদন্তকারীরা জেনেছেন,সেখানে একসঙ্গে পনোরো থেকে আঠারো জনকে আটকে রাখা যায়। আটকে রাখা ব্যক্তির মোবাইল থেকেই তাঁর বাড়িতে ফোন করে টাকার দাবি করত সাদ্দাম বাহিনী। পরিবারের লোককে শোনানো হত অপহৃতের গোঁগানি শব্দ। কয়েক সেকেন্ডের জন্য মুখ খুলে দিয়ে বলতে বলা হতো, সুড়ঙ্গে আটকে রয়েছেন তাঁরা। দাবিমতো টাকা না দিলে সুড়ঙ্গে খুন করে লাশ মাতলায় ভাসিয়ে দেওয়া হবে বলে ঠাণ্ডা গলায় হুমকি দিত সাদ্দাম। এই টাকা সে নিজে সংগ্রহ করত। পেমেন্ট হওয়ার পর গুম ঘর থেকে সংশ্লিষ্টকে বের করে বাইকের পিছনে বসিয়ে তাঁদের বড় রাস্তায় ছেড়ে দিত সাদ্দাম। কতজনকে আটকে রেখে সে টাকা আদায় করেছে তাকে জেরা করে জানার চেষ্টা করবেন তদন্তকারীরা। একইসঙ্গে পুলিস গ্রামে তল্লাশিতে এলে, সুড়ঙ্গে আগ্নেয়াস্ত্র সহ অন্যান্য সরঞ্জাম লুকিয়ে রাখাত সাদ্দাম। নিজে ও তার শাগরেদরা সেখানে আশ্রয় নিত। কিছুদিন আগে তার বাড়ি থেকে দশ মিনিট দূরে চৌবাচ্চার মধ্যে দুটি দেহ পাওয়া গিয়েছিল। পুলিস জেনেছে তাঁদের খুন করে সেখানে ফেলে দিয়েছিল সাদ্দাম। এবার তাকে এই নিয়ে জেরা করবেন তদন্তকারীরা।