দেবব্রত মণ্ডল, বারুইপুর: কুলতলির ‘টানেল ম্যান’ সাদ্দাম সন্ত্রাসবাদী নন। তিনি নাকি একজন সমাজসেবী। কুলতলি কাণ্ড নিয়ে জোর শোরগোলের পরেও বিচারকের সামনে বারুইপুর মহকুমা আদালতে দাঁড়িয়ে এমনই দাবি করলেন সাদ্দামের আইনজীবী। যদিও তাঁর কথায় আমলই দেননি বিচারক। পরিবর্তে সাদ্দামকে ১২ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিল আদালত। আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগে ৫ দিনের পুলিশ হেফাজতে সিপিএম নেতা মান্নান।
কুলতলির জালাবেরিয়া-২ পঞ্চায়েতের বাসিন্দা সাদ্দমের বিরুদ্ধে অনেক দিন ধরেই প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে। এর আগেও তাকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। গত সোমবার সাদ্দামের বাড়িতে অভিযানে যায় পুলিশ। সাদ্দামকে ধরে ফেলে তারা। এর পরেই বাড়ি এবং আশেপাশের মহিলারা পুলিশকে ঘিরে ধরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে। সাদ্দামের ভাই সাইরুল পুলিশকে নিশানা করে গুলি চালায় বলেও অভিযোগ। এই সুযোগে পুলিশের হাত থেকে পালিয়ে যায় সাদ্দাম এবং সাইরুল। অভিযুক্তের বাড়ির খাটের নিচে একটি সুড়ঙ্গের হদিশ মেলে। সেখান দিয়েই সাদ্দাম পালিয়ে যায়। দিনদুয়েক লুকিয়ে থাকার পর অবশেষে বুধবার রাতে গ্রেপ্তার হয় কুলতলি কাণ্ডের মূল পাণ্ডা সাদ্দাম সর্দার। কুলতলির ঝুপড়িঝাড়ার বাণীরধল এলাকার একটি আলাঘর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই ভেড়ির মালিক তথা কুলতলির সিপিএম নেতা মান্নান খানকেও গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বৃহস্পতিবার বারুইপুর মহকুমা আদালতে তোলা হয় সাদ্দাম ও মান্নানকে।
আদালতে সরকারি আইনজীবী দাবি করেন, সাদ্দাম এবং মান্নানের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। গত সোমবার পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চলার ঘটনার ভিডিও ফুটেজেও সাদ্দামকে স্পষ্ট দেখা গিয়েছে বলেই জানান তিনি। জেরার স্বার্থে সাদ্দাম এবং তার ‘আশ্রয়দাতা’ মান্নানকে জেরার স্বার্থে ১৪ দিনের পুলিশ হেফাজতের আবেদন জানান। তবে সাদ্দামের আইনজীবীর দবি, তাঁর মক্কেলের কাছে আগ্নেয়াস্ত্র নেই। সাদ্দামের বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ ভিত্তিহীন।
তিনি আরও বলেন, “সাদ্দাম একজন সমাজসেবী। এলাকায় প্রায়শয়ই রক্তদান শিবিরের আয়োজন করতেন। পুলিশের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ রয়েছে। তাহলে কীভাবে তিনি টেররিস্ট হবেন? ১১৩ টেররিস্ট অ্যাক্টে যা দেওয়া হয়েছে, তা একেবারেই যুক্তিহীন। সেরকম কিছু ঘটেনি।” মান্নানের আইনজীবীও সাদ্দামকে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ উড়িয়ে দেন। তাঁর দাবি, মান্নানের ভেড়ি রয়েছে। তাঁর ভেড়ির পাশে যদি কেউ গা ঢাকা দেন, তবে তার দায় মান্নানের নয়। কোনভাবেই তিনি এই মামলায় যুক্ত নন। অথচ কেন গ্রেপ্তার করা হল, তা স্পষ্ট নয়। সওয়াল জবাব শেষে ধৃতদের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক।