কতটা নিরাপদ শক্তিগড়ের ‘ল্যাংচা হাব’? জেলা প্রশাসনের অভিযানে উঠে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য
প্রতিদিন | ২০ জুলাই ২০২৪
অর্ক দে, বর্ধমান: ১৯ নম্বর জাতীয় সড়কে যাতায়াতকারীরা শক্তিগড়কে চলতি কথায় ‘পিট স্টপ’ বলে থাকেন। ল্যাংচা খেতে আর প্রিয়জনদের জন্য নিয়ে যেতে দিনে হাজার হাজার গাড়ি দাঁড়িয়ে পড়ে অঘোষিত এই ‘ল্যাংচা হাবে’।কিন্তু সেই মিষ্টান্ন আদৌ স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে তৈরি হয়ত? কতটা নিরাপদ এখানকার মিষ্টান্ন ও অন্যান্য খাদ্য সামগ্রী? তা জানতে বৃহস্পতিবার পূর্ব বর্ধমান জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের খাদ্য নিরাপত্তা বিভাগ ও জেলা দুর্নীতি দমন শাখা অভিযান চালাল শক্তিগড়ের এই ল্যাংচা হাবে। আর এই অভিযানেই উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য।
খাদ্য নিরাপত্তা বিভাগের আধিকারিকরা দেখেন, অধিকাংশ দোকানেই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। খাবার তৈরি হয়েছে কবে, সেই তারিখের উল্লেখ নেই অনেক দোকানে। বহু দোকানের নেই FSSAI-এর লাইসেন্স বা রেজিস্ট্রেশন। মেয়াদ উত্তীর্ণ (Expiry Date) বা খারাপ হয়ে যাওয়া খাবারও মিলেছে কিছু দোকানে। কয়েকটি দোকানে মিষ্টি তৈরিতে ব্যবহৃত রং খাবার অযোগ্য অর্থাৎ ভেজাল বা বিষ। সেই রং ব্যবহারের অনুমোদন দেয় না স্বাস্থ্যদপ্তর (Health Department)। এসব কারণে বেশ কিছু দোকানদারকে এদিন নোটিস দেওয়া হয়েছে। আইন মেনে ১৪ দিনের মধ্যে পরিস্থিতি ঠিক না করলে দোকান বন্ধ করে দেওয়ার মতো কড়া পদক্ষেপও করতে পারে স্বাস্থ্যদপ্তর। অন্যান্যদেরও সতর্ক করে নোটিস দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার জেলার ডেপুটি সিএমএইচ-২ সুবর্ণ মজুমদারের নেতৃত্বে শক্তিগড়ের ল্যাংচার দোকানগুলিতে অভিযান চালানো হয়। অভিযানে স্বাস্থ্যদপ্তরের ১০ জন ফুড সেফটি অফিসার ও জেলা দুর্নীতি দমন শাখার ২২ জন কর্মী-আধিকারিক ছিলেন। এদিন মোট ৩৪টি মিষ্টির (Sweets) দোকানে হানা দেয় এই দলটি। স্বাস্থ্যদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, এদিন অভিযানে দেখে গিয়েছে অধিকাংশ দোকানেই অস্বাস্থ্যকর (Unhealthy) পরিবেশ। খাবার তৈরির জায়গা থেকে, মিষ্টান্ন রাখার জায়গা, পরিবেশনের জায়গায় স্বাস্থ্যবিধি (Hygiene)মানা হয় না। থরে থরে খাদ্য সামগ্রী সাজিয়ে রাখা হয়। সেখানে তৈরির তারিখ বা সময়ের কোনও উল্লেখ থাকছে না।
ডেপুটি সিএমওএইচ-২ জানান, কোনও খাবারের দোকান চালাতে গেলে এফএসএসএআই (ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ড অথরিটি অফ ইন্ডিয়া)-এর রেজিস্ট্রেশন বা লাইসেন্স থাকা বাধ্যতামূলক। এদিনের অভিযানে ধরা পড়েছে ১৫টি দোকানের এফএসএসএআই লাইসেন্স বা রেজিস্ট্রেশন নেই। অনুমোদন ছাড়াই দিনের পর দিন ব্যবসা চালানো হচ্ছিল। কিছু দোকান থেকে খারাপ হয়ে যাওয়া বা মেয়াদ উত্তীর্ণ খাবার পাওয়া যায়। সেগুলি দোকানদারের সামনেই নষ্ট করে ফেলে দেওয়া হয়। খাবার অযোগ্য রং মিলেছিল কিছু দোকানে। সেগুলিও নষ্ট করে ফেলে দেওয়া হয়।
তিনি আরও জানান, ১৩ জন দোকানদারকে ‘ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ড অ্যাক্ট ২০০৬’-এর ৩২ ধারায় নোটিস পাঠানো হয়েছে। ৫ জন দোকানদারকে সতর্ক করে নোটিস দিয়েছে খাদ্য নিরাপত্তা বিভাগ। খারাপ হয়ে যাওয়া বা বাসি খাবার যাতে কোনওভাবেই খদ্দেরদের না দেওয়া হয় বা বিক্রি করা হয় তার জন্য মিষ্টান্ন ব্যবসায়ীদের সতর্ক করা হয়েছে। সব দোকানদারই যাতে স্বাস্থ্যসমত উপায়ে মিষ্টি প্রস্তুত ও বিক্রি করেন, দোকানে স্বাস্থ্যকর পরিবেশ বজায় রাখেন তার জন্য বলা হয়েছে এদিন। না হলে পরবর্তী ক্ষেত্রে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এনিয়ে ল্যাংচা ব্যবসায়ী শেখ আলি হোসেন বলেন, “ল্যাংচা তৈরির জন্য ছানার প্রয়োজন হয়। এই ছানা একদিন রেখে দিয়ে তারপর তা দিয়ে ল্যাংচা তৈরি করা হয়। না হলে ল্যাংচা সুস্বাদু হবে না। খাদ্য সুরক্ষা দপ্তরের নিয়ম অনুযায়ী গুণগত মানের দিক থেকে এই ল্যাংচা নিম্নমানের বলে জানানো হয়েছে। খাদ্য সুরক্ষা দপ্তরের অন্যান্য নির্দেশ মেনেই আগামী দিনে ব্যবসা পরিচালনা করা হবে।” শক্তিগড় ল্যাংচা ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সম্পাদক বাবুল মণ্ডল বলেন, “প্রতি বছরই খাদ্য সুরক্ষা বিভাগ ল্যাংচা দোকানগুলিতে গুণগত মান পরীক্ষার জন্য অভিযান চালায়। এদিনও হয়েছে। সেখানে কিছু ব্যবসায়ীর লাইসেন্স নেই বলে দেখা গিয়েছে। ল্যাংচার গুণগত মান নিয়ে সতর্ক করেছেন তারা। সংগঠনের সাথে যুক্ত ব্যবসায়ীদের প্রশাসনের নির্দেশ মেনে ব্যবসা করার জন্য জানানো হবে। নির্দেশ মেনে ব্যবসা চালানোর ক্ষেত্রে প্রশাসনকে সহায়তা করবে আমাদের সংগঠন।”