কিন্তু এহেন বিচারক বা বিচারপতিরা কর্মক্ষেত্রে অবসর গ্রহণের পর তাঁর নিরপেক্ষ সাংবিধানিক অবস্থান থেকে যদি একধাপ নিচে নেমে এসে রাজনৈতিক মতাদর্শের সংকীর্ণ গন্ডির মধ্যে নিজেকে আবদ্ধ করেন, তাহলে জনমানসে তার প্রতিক্রিয়া তো হবেই। প্রশ্ন উঠবে তাঁর অতীতের বিচার কাজের নিরপেক্ষতা নিয়েও। আর এই বিষয়টির তীব্র বিরোধিতা করেছেন আরজেডি সাংসদ এডি সিং। লালুপ্রসাদের দলের এই নেতা শুধুমাত্র বিষয়টির বিরোধিতা করেই ক্ষান্ত হতে চান না। আগামীতে তিনি বিচারপতিদের রাজনীতিতে যোগ দেওয়া আটকাতে রাজ্যসভায় একটি বিল আনতে চলেছেন। প্রাইভেট মেম্বার্স নামে ওই বিলের অন্যতম বিষয় বিচারপতি সংক্রান্ত বিল।
এই বিলে উল্লেখ করা হয়েছে, দ্য কনস্টিটিউশন বিল, ২০২৪-এ বলা হয়েছে, যাঁরা কোনও সাংবিধানিক পদে থাকবেন তাঁরা অবসর নেওয়ার পরে রাজনীতিতে যোগ দিতে পারবেন না। সেই তালিকায় থাকবেন অবসরপ্রাপ্ত বিচারক-বিচারপতি, নির্বাচন কমিশনাররা। সংবিধানের ১২৪, ১৪৮, ৩১৯, ৩২৪ ধারা সংশোধন করে এবং ২২০এ, ৩০৯এ ধারা এনে সাংবিধানিক পদাধিকারীদের রাজনীতিতে যোগদান আটকানোর প্রস্তাব দিয়েছেন রাজ্যসভার সদস্য এডি সিং।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি বেশ কয়েকজন বিচারপতি অবসরগ্রহণের পর রাজনীতিতে যোগদান করেছেন। তাঁর মধ্যে অন্যতম কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়, মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্টের বিচারপতি রোহিত আচার্য। এই দুই বিচারপতি বিচারকের আসনে বসে বেশকিছু যোগান্তকারী এবং আলোড়ন সৃষ্টিকারী রায় দিয়েছিলেন। তার মধ্যে অন্যতম কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় তাঁর রায় নিয়ে রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে তীব্র বিতর্কের সৃষ্টি হয়। তাঁর বেশ কয়েকটি রায় দেশের শীর্ষ আদালত বাতিলও করে দেয়। সেই অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় শেষ পর্যন্ত ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের আগে আচমকা বিচারপতির পদ থেকে পদত্যাগ করে বিজেপিতে যোগ দেন। তিনি সম্প্রতি বিজেপি-র টিকিটে জিতে তমলুক লোকসভার সাংসদও হয়েছেন।
অন্যদিকে ২০১৩ সালের ১২ সেপ্টেম্বর মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্টের বিচারপতি নিযুক্ত হন রোহিত আর্য। ২০১৫ সালের ২৬ মার্চ থেকে স্থায়ী বিচারপতি হিসাবে তিনি বিচার কাজ শুরু করেন। এই আদালতের বিচারপতি থাকাকালীন তাঁর দুটি রায় নিয়েও ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। জানা গিয়েছে, ২০২০ সালে শ্লীলতাহানিতে অভিযুক্ত এক ব্যক্তিকে জামিন দিয়েছিলেন বিচারপতি রোহিত আর্য। যদিও সেই জামিন পরে বাতিল করে সুপ্রিম কোর্ট। এছাড়া দুই কমেডিয়ানের বিরুদ্ধে ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত দেওয়ার অভিযোগ উঠেছি। বিষয়টি নিয়ে আদালতে মামলা হয়। ২০২১ সালে সেই মামলায় মুনাওয়ার ফারুকি এবং নলীন যাদবকে জামিন দিতে অস্বীকার করেন বিচারপতি রোহিত আর্য। পরে তাঁরা দুজনেই সুপ্রিম কোর্টে জামিন পেয়ে যান।