নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: ২১ জুলাই ধর্মতলায় তৃণমূলের শহিদ তর্পণের মঞ্চে বছরের পর বছর ছিল তাঁদের উজ্জ্বল উপস্থিতি। দলনেত্রীর সমাবেশ সফল করতে কয়েকদিন আগে থেকেই তাঁদের ব্যস্ততা চরমে থাকত। শহিদ দিবসের আরও একটি সমাবেশ হয়ে গেল ধর্মতলায়। কিন্তু কলকাতায় থেকেও টিভির পর্দায় সভা দেখলেন তাঁরা। অন্য কোনও উপায় ছিল না! কারণ, তাঁরা দু’জন দুর্নীতির অভিযোগে বর্তমানে জেলবন্দি প্রাক্তন দুই মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক (বালু)।
প্রেসিডেন্সি জেলের সেলে রবিবার সাতসকালেই ঘুম থেকে উঠে পড়েন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক (বালু)। টহল দিচ্ছিলেন দু’জন জেলকর্মী। তাঁদের ডেকে তিনি জিজ্ঞাসা করেন, ‘উত্তর ২৪ পরগনা জেলা থেকে কত লোক এসেছে, কিছু শুনলেন টিভিতে? ওই দুই কর্মী মাথা নেড়ে না বললে নিজেই স্বগতোক্তির মতো করে বলে ওঠেন, ‘পরপর ভোটে দলের ভালো ফল হচ্ছে। আশা করছি জেলা থেকে প্রচুর লোক আসবে।’ এরপর তিনি জেলের নির্দিষ্ট স্থানে রাখা টিভি চালিয়ে দেওয়ার জন্য কর্মীদের অনুরোধ করেন। লিকার চায়ে চুমুক দিতে দিতে টিভির দিকে চোখ রাখেন বালু। কাছাকাছি থাকা অন্য বন্দিরা নিজেদের মধ্যে জোরে জোরে কথা বললে হাতজোড় করে তাঁদের থামতে বলেন। জেল সূত্রে খবর, তারপরও হইহল্লা না থামায় তিনি বিরক্তি প্রকাশ করে উঠে যান। একসময়ের দোর্দন্ডপ্রতাপ মন্ত্রী এখন কারাগারের চার দেওয়ালের মধ্যে আর পাঁচজন বন্দির মতোই থাকতে বাধ্য হচ্ছেন বলে জানান কর্মীরা। তাঁর সঙ্গে দেখা করতে আসা লোকজনের সংখ্যাও দিনে দিনে কমে আসছে বলে জানালেন তাঁরা। এক অফিসারের কথায়, ‘জেল কোড অনুযায়ী বন্দিরা যেটুকু পরিষেবা পেয়ে থাকেন, ওঁর ক্ষেত্রেও সেই একই ব্যবস্থা রয়েছে।’
এই জেলেই দীর্ঘদিন ধরে বন্দি রয়েছেন শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় অভিযুক্ত প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। এদিন টিভিতে ধর্মতলার সমাবেশ দেখে এক সময় তিনি কেঁদে ফেলেন। কয়েকজন জেলকর্মী তাঁর কাছে এসে জানতে চান, ‘আপনার কি কোনও সমস্যা বা শরীর খারাপ লাগছে? জেলের একটি সূত্র জানাচ্ছে, প্রাক্তন মন্ত্রী তখন বারবার বলতে থাকেন, ‘বিশ্বাস করুন, আর ভালো লাগছে না জেলের চার দেওয়ালের মধ্যে। টিভিটা একটু দয়া করে বন্ধ করে দিন। আমি সেলে ফিরে যাচ্ছি।’ সেলে গিয়ে তিনি বিভিন্ন সংবাদপত্রের পাতায় চোখ রাখেন। অন্য সেলের টিভিতে তখন শোনা যাচ্ছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাষণ। ‘দিদিমণি বলছেন?’— জিজ্ঞাসা করেই টিভির দিকে এগিয়ে গেলেন পার্থ।