চন্দ্রজিৎ মজুমদার, কান্দি: একেই যেন বলে সাতজন্মের সঙ্গী। একে অপরের পরিপূরক। সাতপাক ঘুরে, মন্ত্র পড়ে দুটি মন বাঁধা পড়েছিল। বিদায় নেওয়ার সময়েও হল তাই। স্বামীর মৃত্যুশোক সামলাতে পারেননি স্ত্রী। স্বামীর মৃত্যুর তিন মিনিটের মধ্যে বুকে মাথা রেখে মৃত্যু হল স্ত্রীর। মঙ্গলবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে মুর্শিদাবাদের ভরতপুর থানার ভোলতা গ্রামে। এই ঘটনায় গ্রামের সকলেই তাজ্জব।
মৃতরা হলেন শংকর মণ্ডল (৮৫) ও স্ত্রী নিয়তি মণ্ডল (৬৮)। তাঁদের এক ছেলে ও দুই মেয়ে। নাতি, নাতনিও রয়েছে। প্রায় পাঁচদশক আগে তাঁদের বিয়ে হয়। শংকরবাবু দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ। শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা ছিল তাঁর। কয়েকদিন আগে তাঁকে ভরতপুর গ্রামীণ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়। হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফেরার পর শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন। প্রায় ৬ দিন শয্যাশায়ী ছিলেন। সোমবার রাত সাড়ে আটটা নাগাদ তাঁর মৃত্যু হয়। স্বামীর মৃত্যু স্বাভাবিকভাবেই মানতে পারেননি স্ত্রী।
স্বামীর বুকে মাথা রেখে কান্নাকাটি করতে শুরু করেন। তিন মিনিটের মাথায় আচমকাই কান্না থেমে যায় বৃদ্ধার। শোকের বাড়িতে তা দেখে মৃতের পরিবার ও প্রতিবেশীরা চমকে ওঠেন। বৃদ্ধাকে ডাকাডাকি করতে শুরু করেন। নিথর বৃদ্ধা স্বামীর দেহের পাশে পড়ে যায়। গ্রামের এক চিকিৎসক তাঁর পরীক্ষা নিরীক্ষা করেন। তিনি জানান, স্বামীর মৃত্যুশোক সামলাতে না পেরে মৃত্যু হয়েছে স্ত্রীরও।
প্রতিবেশী সাধনা মণ্ডল বলেন, “দুজনের মধ্যে এত মিল ছিল যে বলে বোঝানো যাবে না। যেখানেই যেতেন তাঁরা একসঙ্গে যেতেন। মাঠে গরু চড়ানো থেকে মন্দিরে যাওয়া সর্বত্র পাশাপাশি দেখা যেত তাঁদের।” মৃতের ছেলে অনন্ত বলেন, “জন্মের পর থেকে বাবা ও মাকে কোনদিন আলাদা থাকতে দেখিনি। সব কিছুতেই দুজনের মতামত একই হত।” মঙ্গলবার সাটুইগ্রামের শ্মশানে শেষকৃত্য হয় তাঁদের।