সঞ্জিত সেনগুপ্ত, শিলিগুড়ি: - হ্যালো, মেয়র স্যার বলছেন?
- বলছি।
- স্যার, আমি ৩৪ নম্বর ওয়ার্ড থেকে শ্রেয়সী বণিক বলছি। কণ্ঠস্বরেই বোঝা যাচ্ছিল কোনও কিশোরী কথা বলছে। মেয়র জিজ্ঞেস করেন, তুমি কী করো, স্টুডেন্ট? সঙ্গে সঙ্গে উত্তর, হ্যাঁ স্যার। আমি হাকিমপাড়া বালিকা বিদ্যালয়ে ক্লাস সিক্সে পড়ি।
মেয়র বলেন, বলো, কী বলবে তুমি। শ্রেয়সী বলে স্যার, স্কুলে আমাদের ক্লাসে ফ্যান চলে, কিন্তু গায়ে একটুও হাওয়া লাগে না। এই গরমে ক্লাস করতে পারছি না। অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। আমরাও অসুস্থ হয়ে পড়ব। শনিবার শিলিগুড়ি পুরসভার ‘টক-টু মেয়র’ ফোন-ইন লাইভ অনুষ্ঠানে শ্রেয়সী বণিকের এই ফোন সকলের হৃদয় ছুঁয়ে যায়। মেয়র তাকে আশ্বস্ত করেন। বলেন, চিন্তা করো না। সোমবার তোমার স্কুলে যাব। ক্লাসরুমে নতুন ফ্যান কিনে লাগিয়ে দিয়ে আসব। তুমি কোন সেকশনে পড়ো। ও প্রান্ত থেকে উত্তর, ‘সি’ সেকশনে পড়ি।
এতদিন টক-টু মেয়র অনুষ্ঠানে এলাকার নাগরিকরা তাঁদের সমস্যা, কাজে গাফিলতির অভিযোগ, অবৈধ নির্মাণ, পানীয় জলের সমস্যা, বেহাল রাস্তা নিয়ে মেয়র গৌতম দেবকে ফোন করে জানিয়েছেন। কাউন্সিলারদের বিরুদ্ধেও নানা অভিযোগ জমা পড়েছে। ব্যক্তিগত সমস্যা নিয়েও মেয়রের সাহায্য চেয়ে মাঝে মধ্যেই অনেকে এই অনুষ্ঠানে ফোন করেন। কেউ চিকিৎসার জন্য সাহায্য চান। অসহায় বাবা-মা সন্তানের চাকরির জন্যও আবেদন জানান।
ছাত্রী শ্রেয়সীর মতো ফোন এর আগে কেউ করেনি শিলিগুড়ির মেয়রকে। ষষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রী গরমে স্কুলে ক্লাস করতে না পারার যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে সরাসরি মেয়রকে ফোন করায় পুরসভার আধিকারিকরাও বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন। অনুষ্ঠান শেষে এনিয়ে প্রশ্ন করা হলে মেয়র বলেন, এই অনুষ্ঠানের এখানেই সার্থকতা। খুব ভালো লাগছে ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী সাহস করে তার সমস্যার কথা বলছে। শুধু তাই নয়, সমস্যার সমাধানের জন্য ওইটুকু মেয়ে যে আমার উপর ভরসা করছে, এটা নিঃসন্দেহে বড় পাওনা। অনুষ্ঠানটি এজন্যই শুরু করেছিলাম। সারাবছর ধরেই সকলের কাছে পৌঁছনোর চেষ্টা করি। তবু অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ সম্ভব হয় না। এদিন ওই ছাত্রী তার স্কুলের সমস্যা নিয়ে যেভাবে ফোন করেছে তা হৃদয় ছুঁয়ে গিয়েছে। আমি সোমবার নতুন পাখা কিনে নিয়ে গিয়ে ওর ক্লাসরুমে লাগিয়ে দিয়ে আসব।