নিরুফা খাতুন: বার্ধক্য়ের ধূসরতায় আটকে গিয়েছে বংশবিস্তার। আলিপুরে চিড়িয়াখানায় ব্যাঘ্রকুলের সংখ্যা বাড়াতে কর্তৃপক্ষের ভরসা এখন তাই যৌবনের সজীবতা। প্রজননে সক্ষম টগবগে তরুণ-তরুণী বাঘ-বাঘিনি এনে শার্দূল সংসার ফের ভরভরন্ত করার চেষ্টা চলাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। সেই উদ্যোগের অঙ্গ হিসাবে নন্দনকানন থেকে আসছে আরও একটি তাজা বাঘিনি ‘ত্রুপ্তি’। ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় জু অথরিটির কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছে রাজ্য জু অথরিটি। কেন্দ্রের সবুজ সংকেত পেলেই নন্দনকাননের (Nandankanan) বছর দেড়েকের ওই পাত্রী পাকাপাকিভাবে ঘর বাঁধবে আলিপুরে।
শেষবার ২০০৬ সালে বাঘিনি ‘কৃষ্ণা’ আর সাদা বাঘ ‘অনির্বাণে’র কোল আলো করে এসেছিল ‘বিশাল’। এখনও পর্যন্ত সেই শেষ। আর কোনও খুশির খবর শোনা যায়নি আলিপুরে বাঘের পরিবারে। দীর্ঘ বছর ধরে কর্তৃপক্ষ অনেক চেষ্টা করে চলেছে বাঘের প্রজননের। কিন্তু সব চেষ্টা বিফলে যায়। এমনকী ঘরের ছেলেমেয়েদের জন্য ভিন রাজ্য থেকেও পাত্র-পাত্রী জোগাড় করে নিয়ে আসা হয়েছিল। ২০১৬ সালে নন্দনকানন থেকে ‘ঋষি’, ‘পায়েল’, ‘শীলা’ ও ‘স্নেহাশিস’– চার চারটি বাঘ নিয়ে আসা হয়েছিল। ‘শীলা’ ও ‘স্নেহাশিস’কে অবশ্য পরে উত্তরবঙ্গে বেঙ্গল সাফারিতে পাঠানো হয়।
সেখানে তারা সুখের সংসার পেতেছিল। ‘শীলা’ ও ‘স্নেহাশিসে’র সন্তানও হয়। অথচ আলিপুরে কেউ সুখবর দিতে পারেনি। যৌবনে ভরা তরুণ ‘স্নেহাশিস’কে তাই আলিপুরে ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সে আলিপুরে ‘পায়েল’ ও সাদা বাঘিনি ‘রূপা’র সঙ্গে নতুন করে সংসার পাতে। সেই সংসার অবশ্য বেশিদিন সুখের হয়নি। দুই বাঘিনির থেকে দূরত্ব তৈরি করে নেয় সে।
এরপর ২০১৯ সালে পাটনা (Patna) থেকে একটি সাদা বাঘ ‘রাজা’কে নিয়ে আসা হয়েছিল ‘রূপা’র জন্য। সেও নিরাশ করে কর্তৃপক্ষকে। প্রায় ১৮ বছর ধরে আলিপুরে ব্যাঘ্র পরিবার নিঃসন্তান। ‘রূপা’ যৌবন পেরিয়ে এখন বৃদ্ধা। বার্ধক্যজনিত অসুখে ভুগছে। ‘পায়েলে’র বয়স হয়েছে। সুন্দরবন থেকে আসা রয়্যাল বেঙ্গল ‘রাজা’ও এখন বুড়ো বাঘ। এদের দিয়ে আর বংশবিস্তার হবে না।তাই বাইরে থেকে তরুণ বাঘ-বাঘিনি নিয়ে এসে প্রজনন করতে চাইছে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ।
গত মার্চে বেঙ্গল সাফারি থেকে ‘শীলা’ ও ‘বিভানে’র এক ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে আসা হয় আলিপুরে। এপ্রিলে বিশাখাপত্তনমের ইন্দিরা গান্ধী জুলজিক্যাল পার্ক থেকে একটি সাদা বাঘিনি নিয়ে আসা হয়। রাজ্য জু অথরিটির সদস্য সচিব সৌরভ চৌধুরি বলেন, “নন্দনকানন থেকে আরও একটি বাঘিনি নিয়ে আসার কথা রয়েছে। বিনিময়ে আলিপুর থেকে জিরাফ পাঠানো হবে। ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় জু অথরিটিকে একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এখন শুধু কেন্দ্রের ছাড়পত্রের অপেক্ষা।” আলিপুর চিড়িয়াখানার অধিকর্তা শুভঙ্কর সেনগুপ্ত জানান, ‘এটা ঠিক দীর্ঘ বছর বাঘের পরিবারে নতুন সদস্য জন্মায়নি। ওদের প্রজননের চেষ্টা চলছে। পুরনো যারা রয়েছে তাদের মধ্যে অনেকের বয়স হয়েছে। তাই বাইরে থেকে বাঘ নিয়ে এসে প্রজননে জোর দেওয়া হচ্ছে। এবছরই তিনটি বাঘ এসেছে। তাদের বয়সও কম। আশা করছি, এরা হতাশ করবে না।’ প্রজননের পাশাপাশি জিনগত বৈচিত্রে গুরুত্ব দিতে বাঘ বিনিময়ের পরিকল্পনাও গ্রহণ করেছে রাজ্য বন দপ্তর। আগামী বছর থেকে এই কাজ শুরু করা যাবে বলে আশাবাদী রাজ্য জু অথরিটি।