নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: ২০২১ সালের ১ জুলাই। বাসে চাপা পড়ে মৃত্যু হয়েছিল কলকাতা পুলিসের এক কনস্টেবলের। তিন বছর পেরিয়ে ফের পুলিসের রক্ত ঝরল ‘রেড’ রোডে। গুরুতর জখম অবস্থায় কলকাতা পুলিসের ওই ইনসপেক্টর একবালপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। কিন্তু উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, দুপুরের ওই দুর্ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ঘাতক গাড়িটিকে চিহ্নিতই করা যায়নি।
সন্তোষ রায়। ইনসপেক্টর পদমর্যাদার এই অফিসার কলকাতা পুলিসের থার্ড ব্যাটালিয়নে কর্মরত। বডিগার্ড লাইনসে কোয়ার্টারেই থাকতেন। কলকাতা পুলিস সূত্রে খবর, এদিন ছুটি ছিল সন্তোষবাবুর। পুলিসের লাল বুলেট চালিয়ে ধর্মতলা থেকে রেড রোড ধরে খিদিরপুরের দিকে যাচ্ছিলেন। তখন দুপুর ১টা বেজে ১০। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, রেড রোডের উপরেই তাঁর বাইকটিকে প্রথমে চেপে দেয় একটি গাড়ি। তারপর পাশ থেকে ধাক্কা মারে। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তায় পড়ে যান ১৯৯৬ ব্যাচের এই অফিসার। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই জ্ঞান হারান তিনি। তাঁর চোখ, থুতনি সহ মুখের একাধিক জায়গা থেকে রক্ত বের হতে থাকে। এরপর আশেপাশের বাইক চালকরা গাড়ি থামিয়ে উদ্ধারকাজে নামেন। ১০০ ডায়াল করে খবর দেওয়া হয় পুলিসে। ঘটনাস্থলে পৌঁছয় সাউথ ট্রাফিক গার্ড ও ময়দান থানার পুলিস। সন্তোষবাবুর পকেটেই ছিল সচিত্র পরিচয়পত্র। সেখান থেকে পরিচয় জানা যায়। সাউথ ট্রাফিক গার্ডের পুলিস জখম ইনসপেক্টরকে উদ্ধার করে এসএসকেএম হাসপাতালে পাঠায়। খবর দেওয়া হয় আহতের পরিবারকেও। তাঁরাই পরে একবালপুরের নামী বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান সন্তোষবাবুকে। জানা গিয়েছে, তাঁর মাথার চোট গুরুতর।
যদিও সরকারিভাবে কলকাতা পুলিসের তরফে এই দুর্ঘটনার কথা স্বীকার করা হয়নি। দৈনিক রিপোর্টেও এই বিষয়টি সংবাদমাধ্যমকে জানানো হয়নি। তার থেকেও উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, ওই গাড়িটিকে এখনও চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি। লালবাজারের একটি সূত্রের খবর, যে গাড়িটি সন্তোষবাবুকে ধাক্কা মেরে চলে গিয়েছে সেটির খোঁজ চলছে। তবে রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সন্ধান মেলেনি। জানা গিয়েছে, গাড়িটি পুলিসের বাইকে ধাক্কা মেরে আরও দ্রুত গতিতে চম্পট দেয়। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ অনুযায়ী, গাড়িটি হাওড়াগামী বিদ্যাসাগর সেতু ধরে পালিয়েছে। সেটির নম্বর এখনও পর্যন্ত চিহ্নিত করতে পারেনি পুলিস। তার চেষ্টা চালাচ্ছেন তদন্তকারীরা।
তিন বছর আগে ১ জুলাই রেড রোড ও উট্রাম রোডের সংযোগস্থলে ডিউটি করছিলেন সাউথ ট্রাফিক গার্ডের কনস্টেবল বিবেকানন্দ দেব। বৃষ্টি ভেজা রাস্তায় অন্য বাসের সঙ্গে রেষারেষি করছিল একটি মিনিবাস। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সরাসরি ওই পুলিসকে পিষে দেয় বাসটি। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়েছিল তাঁর। ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন তৎকালীন পুলিস কমিশনার সৌমেন মিত্র। তদন্তে দেখা যায়, ৪৫ দিন পর ওই মিনিবাসটি রাস্তায় নেমেছিল। যান্ত্রিক গোলযোগের জেরেই দুর্ঘটনাটি ঘটে।