‘সেলফিজোন’ রক্ষায় তৎপর সেচদপ্তর মহানন্দার ঘাটে তৈরি হচ্ছে রিফলেক্টার বাঁধ
বর্তমান | ৩০ জুলাই ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি, শিলিগুড়ি: দু’টি রিফলেক্টার বাঁধ গ্রাসের পর শিলিগুড়ি শহরের লালমোহন মৌলিক নিরঞ্জন ঘাটে ছোবল বসিয়েছে মহানন্দা নদী। গ্রিনসিটি মিশন প্রকল্পে তৈরি সেই ঘাটের একাংশের তলার মাটি ধসছে। সংশ্লিষ্ট এলাকা ‘সেলফিজোন’ হিসেবে পরিচিত। তাই নদীর জলস্তর কিছুটা কমতেই সেই ঘাট রক্ষায় ঝাঁপিয়েছে সেচদপ্তর। ইতিমধ্যে তারা সেখানে তিনটি নতুন রিফলেক্টার বাঁধ তৈরি করেছে। আরও দু’টি তৈরি করবে। অন্যদিকে, প্রায় এক মাস ধরে বন্ধ ধস ও নদী ভাঙনে বিধ্বস্ত কালিম্পং ও সিকিমগামী ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক। এদিন নতুন করে ধসের জেরে দিনভর অবরুদ্ধ ছিল গোরুবাথানের সুনতান রোড। সমগ্র পরিস্থিতির জেরে পর্যটন ব্যবসা কার্যত লাটে উঠেছে।
বর্তমানে শিলিগুড়ি শহরের দর্শনীয় স্থানগুলির মধ্যে মহানন্দা নদীর লালমোহন মৌলিক নিরজঞ্জন ঘাট অন্যতম। ইদানীং সকাল ও সন্ধ্যা সেখানে ভিড় করেন দর্শনার্থীরা। সঙ্গে চলে সেলফি তোলার হিড়িক। চলতি বর্ষায় এই ঘাটেই মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় দু’টি রিফলেক্টার বাঁধ। নদীর স্রোতের ধাক্কায় একটি বাঁধ উড়ে গিয়েছে। আর একটি বাঁধের একাংশ থেকে বোল্ডার খসে পড়ছে। পাশাপাশি ঘাটে থাবা বসিয়েছে নদী। যার জেরে তলার মাটি ধসে গিয়ে ঘাটের একাংশ নদীর মুখে ঝুলছে। নদীর জলস্তর কমায় জরুরি ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট ঘাট মেরামোতিতে নেমেছে সেচদপ্তর।
প্রশাসন সূত্রের খবর, গ্রিন সিটি মিশন প্রকল্পে তৈরি ওই ঘাটে চারটি রিফলেক্টার বাঁধ ছিল। যার মধ্যে দু’টি বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেখানে নতুন করে বোল্ডার ও তার জালি দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে পাঁচটি রিফলেক্টার বাঁধ। ইতিমধ্যে দু’দিনে ১২ জন শ্রমিক লাগিয়ে তৈরি করা হয়েছে তিনটি রিফলেক্টার। সেগুলি ৫ থেকে ৭ মিটার লম্বা। আরও দু’টি রিফলেক্টার তৈরি করা হবে। একই সঙ্গে ফোকলা হয়ে যাওয়া ঘাটের তলায় দেওয়া হবে লাইলনের জাল ও বালির বস্তা। এতে খরচ হবে প্রায় ৪ লক্ষ ৭ হাজার টাকা। সেচদপ্তরের শিলিগুড়ি ডিভিশনের ইঞ্জিনিয়াররা জানিয়েছেন, জরুরি ভিত্তিতে এই কাজে হাত দেওয়া হয়েছে। তা শীঘ্রই শেষ হবে।
সংশ্লিষ্ট এলাকা শহরের ১০ নম্বর ওয়ার্ডের অধীনে। স্থানীয় কাউন্সিলার তথা পুরসভার বিদ্যুৎ বিভাগের মেয়র পরিষদ সদস্য কমল আগরওয়াল বলেন, সাত দিন আগে বাঁধগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তা ফেলে না রেখে মেরামত করছে সেচদপ্তর। এটাই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের কর্মসংস্কৃতি। সংশ্লিষ্ট বিষয়টি নিয়ে মেয়র গৌতম দেবের সঙ্গেও কথা হয়েছে। বর্ষার পর সেখানে ঘাট আরও ভালোভাবে মেরামত করা হবে।
অন্যদিকে, ধস ও নদী ভাঙন বিধ্বস্ত কালিম্পংয়ের ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক এখনও স্বাভাবিক হয়নি। বৃষ্টি ও ধসের জেরে সংশ্লিষ্ট রাস্তা মেরামতির কাজ ব্যাহত হচ্ছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, রাস্তাটি কালিম্পং ও সিকিমের লাইফ লাইন। ৩০ জুন থেকে সেটি বন্ধ। আজ, মঙ্গলবার রাস্তা বন্ধের মেয়াদ একমাস পূর্ণ হবে। এরজেরে কালিম্পং ও সিকিম নির্ভর পর্যটন ব্যবসা ব্যাপকভাবে মার খেয়েছে। কালিম্পংয়ের জেলাশাসক বালা সুব্রমনিয়ান টি বলেন, ওই রাস্তা মেরামতির কাজ চলছে।
এদিকে, এদিন বৃষ্টির জেরে গোরুবাথান ব্লকের সুনতানে ধস নামে। যার জেরে দিনভর শেরপাটার ও আপারফাগু গ্রামের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ ছিল। ব্লক প্রশাসন জানিয়েছে, আর্থমুভার দিয়ে ধস সরিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা হয়েছে। শিলিগুড়ির মহানন্দা নদী। - নিজস্ব চিত্র।