সঞ্জিত ঘোষ, নদিয়া: তাহেরপুরের ব্যবসায়ী রাজা ভৌমিক খুনে ৪ অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন সাজা ঘোষণা করল রানাঘাট মহকুমা আদালত। খুনের মাস্টারমাইন্ড বর্ধমানের বাসিন্দা রাসমণি বিশ্বাস ও তার স্বামী দেবব্রত-সহ চার অভিযুক্তকে গ্রেপ্তারের সাত মাসের মধ্যেই দোষী সাব্যস্ত করেছেন রানাঘাট ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টের বিচারক মনোদীপ দাশগুপ্ত। সোমবারই তাদের দোষী ঘোষণা করা হয়েছিল। মঙ্গলবার তাদের সাজা ঘোষণা হল।
গতবছর শীতের রাতে নদিয়ার (Nadia) তাহেরপুরের বাসিন্দা ব্যবসায়ী রাজা খুন হন। বাড়িতে ঢুকে তাঁকে সামনে থেকে গুলি করে পালায় আততায়ীরা। ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশকে বেগ পেতে হয়। ওই ব্যবসায়ীর বাড়িটি নির্জন এলাকায় হওয়ার কারণে ঘটনার পর আশেপাশের কেউই আততায়ীদের দেখতে পায়নি। কারা কী কারনে রাজাকে খুন করল তা নিয়ে ধন্ধে ছিল পরিবারও। এমনকী কোনও সিসিটিভি (CCTV) ফুটেজও মেলেনি।
শেষে শুধুমাত্র চুরি যাওয়া মোবাইল ফোনের টাওয়ার লোকেশনের সূত্র ধরেই অপরাধীদের নাগাল পায় পুলিশ। তদন্তে উঠে আসে অভিযুক্তরা ভিনরাজ্যে পালিয়েছে। তার পরেই ডিএসপি বর্ডার, রানাঘাটের এসডিপিও, তাহেরপুর থানা এবং স্পেশাল অপারেশন টিমের আধিকারিকদের নিয়ে একটি বিশেষ দল তৈরি করা হয়। ভিনরাজ্য থেকে অভিযুক্তদের পাকড়াও করে নিয়ে আসা হয়।
আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩২৩, ৩০২, ৫০৬, ৩৪ নম্বর ধারা এবং অস্ত্র আইনের ২৫, ২৭ নম্বর ধারা অনুযায়ী এদিন চার অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করেন বিচারক। সেই অনুযায়ী মঙ্গলবার তাদের বিরুদ্ধে সাজা ঘোষণা হয়। রানাঘাট আদালতের আইনজীবীদের একাংশ জানান, ‘অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই মামলার অবশেষে নিষ্পত্তি হল। আইনের হাত থেকে যে কোনও অপরাধী নিস্তার পেতে পারে না, তা আবারও প্রমাণিত হল।’
২০২৩ সালের ৮ ডিসেম্বর রাজার তাহেরপুরের (Taherpur) বাড়িতে ঢুকে স্ত্রীর সামনে গুলি করে খুন করেছিল আততায়ীরা। খুনের ঘটনায় মাস্টারমাইন্ড ছিল পূর্ব বর্ধমানের বাসিন্দা রাসমণি বিশ্বাস এবং রানাঘাটের হবিবপুরের বাসিন্দা দেবব্রত বিশ্বাস। তারা সম্পর্কে স্বামী-স্ত্রী। প্রায় বছরদুয়েক আগে ব্যবসা সংক্রান্ত বিষয়ে তাদের চার লক্ষ টাকা ধার দিয়েছিলেন রাজা। অভিযুক্তরা সেই টাকা মেটাতে গড়িমসি করলে পুলিশের কাছে অভিযোগ জানানোর কথা বলেন রাজা।
এরপরই পথের কাঁটা সরাতে তাঁকে খুন করার পরিকল্পনা করে এই দম্পতি। দল ভারী করতে টাকার টোপ দিয়ে তাহেরপুরের দুই দুষ্কৃতী সৌরভ মজুমদার এবং হৃদয় মণ্ডলকে ভাড়া করে তারা। ঘটনার দিন রাতে কালো মুখোশ পড়ে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে রাজার বাড়িতে ঢুকে তাঁকে খুন করে দেবব্রত, সৌরভ এবং হৃদয়। খুনের ঘটনার পাঁচ দিনের মধ্যেই গ্রেপ্তার করা হয় চার অভিযুক্তকে। দেবব্রত এবং হৃদয় ভিনরাজ্যে পালিয়ে গিয়েও পুলিশের জালে ধরা পড়ে। পুলিশের দাবি, জেরার মুখে নিজের হাতে রাজাকে গুলি করার কথা স্বীকার করে নিয়েছিল দেবব্রত। মামলা দায়েরের ২৩০ দিনের পর সাজা ঘোষণা করলেন বিচারক।