সংবাদদাতা, দিনহাটা: আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করার মূল দায়িত্ব জেলা পুলিস সুপারের কাঁধে। সেই দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সৃজনশীলতায় ব্যস্ত কোচবিহারের এসপি দ্যুতিমান ভট্টাচার্য। শুধু পুলিস কর্তা হিসেবে নয়, কার্টুনিস্ট, চিত্র পরিচালক ও লেখক, পশু ও পরিবেশপ্রেমী হিসেবেও পরিচিতি রয়েছে তাঁর। অবসর সময়ে নিয়মিত ডায়েরিতে নথিবদ্ধ করছেন কোচবিহারে তাঁর স্মৃতি। কার্টুনের মাধ্যমে দৃশ্যপট এঁকে সংক্ষিপ্ত তথ্য লিখছেন। সেই তথ্যগুলি সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোডও করছেন। এসপি’র চোখে ভিন্নভাবে কোচবিহার দর্শনের কার্টুন সাড়া ফেলেছে। এককথায় কোচবিহার গ্রাফিক্স নভেল বানাচ্ছেন তিনি।
গ্রামগঞ্জ ঘুরে কাঁঠাল গাছ খুঁজে পেয়েছেন তিনি। পরবর্তীতে খোঁজ নিয়ে জেনেছেন ,কোচবিহার জেলা কাঁঠাল উৎপাদনে উত্তরবঙ্গে সেরা। সেই তথ্য তুলে ধরে কোচবিহারের কাঁঠালের কার্টুন এঁকেছেন ডায়েরিতে। ভাওয়াইয়া গানের শিল্পী আব্বাস উদ্দিনেরও জন্ম কোচবিহার জেলার তুফানগঞ্জে। পরে ওপার বাংলায় চলে গিয়েছিলেন তিনি। তবে তাঁর জন্মভিটা এখনও রয়েছে জেলায়। ঐতিহাসিক সেই স্মৃতি বিজরিত আব্বাস উদ্দিনের জন্মভিটে কার্টুনের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন এসপি।
কোচবিহারের কুচলিবাড়ি থানা এলাকায় রয়েছে কলসিপাড়া। কলসের মতো আকৃতি বিশিষ্ট এই গ্রামেও রয়েছে স্মৃতি। ২০০৬ সালে ভারত-বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীদের লড়াইয়ে প্রাণ হারায় দুই দেশের কয়েকজন। সীমান্ত ঘেঁষা কলসিপাড়ারও কার্টুন রয়েছে তার ডায়েরিতে।
রথযাত্রার ডিউটির দিনে হয়েছে এক অনবদ্য অভিজ্ঞতা। রথযাত্রা শেষে রাস্তাজুড়ে লটকার ছড়াছড়ি। পড়ে থাকা লটকা রাস্তা থেকে কুড়িয়ে খেয়েছেন তিনিও। বাংলাদেশের ধামরাই ও টাঙ্গাইলে রথের যাত্রায় লটকার প্রচলন আছে। এই রাজ্যে নবদ্বীপের পাশাপাশি কোচবিহারও একই প্রথা। রবি ঠাকুরের কবিতার লাইন দিয়ে রথযাত্রার কার্টুনের বর্ণনায় লটকা খাওয়ার কথাও লিখেছেন তিনি।
অফিসের কাজে এক ইঞ্জিন বিশিষ্ট বিমানে চেপে কলকাতা গিয়েছেন। পাইলটের পিছনে বসা সিটে এঁকেছেন সেই চিত্র। তাঁর জীবনে একসময়ে গল্পে পড়া সিঁধেল চোরের সন্ধান পেয়েছেন কোচবিহারে। এই জেলার অধিকাংশ বাড়ি টিনের। নীচে মাটি। সিঁধেল চোরেরা সহজেই সিঁধ কাটতে পারে এখানে। তাই এখনও সিঁধেল চোরের উপদ্রব রয়েছে। সেই কাহিনি ফুটে উঠেছে পুলিস কর্তার আঁকা কার্টনে।
কোচবিহার শহরের বৈরাগীদিঘির পাড়ে মদনমোহন মন্দির। বৈরাগীদের আড্ডার কথা তুলে ধরে মদনমোহন বাড়ির লোক কার্টুন এঁকেছেন তিনি। এছাড়াও দৈনন্দিন জীবনে আরও কোচবিহার সম্পর্কিত অভিজ্ঞতা নিয়মিত স্থান পেয়েছে তাঁর কার্টুনে। ফাঁকা সময়ে কার্টুন এঁকে সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড করেন। কোচবিহারের চাকরি করতে এসে শুধু আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা নয়, জেলার ইতিকথাও ফুটিয়ে তুলছেন তিনি।
এসপি বলেন, ‘গ্রাফিক্স নভেলের মতো কোচবিহারকে তুলে ধরার চেষ্টা করছি। মজাদার কার্টুন এঁকে সংক্ষিপ্ত তথ্যের মাধ্যমে কোচবিহারের ইতিহাস, সংস্কৃতি তুলে ধরছি।’ পুলিস সুপার দ্যুতিমান ভট্টাচার্য।