• DYFI সম্পাদক থেকে মুখ্যমন্ত্রী, কট্টর পথ কখনও নয়
    এই সময় | ০৯ আগস্ট ২০২৪
  • ১৯৬৮-র জুন। যুব সংগঠন তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে বঙ্গ সিপিএম। কিন্তু নতুন সংগঠনের সম্পাদক কে হবেন? চার ফায়ারব্র্যান্ড ছাত্র-যুব নেতা দীনেশ মজুমদার, বিমান বসু, শ্যামল চক্রবর্তী ও সুভাষ চক্রবর্তীর কাঁধে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব রয়েছেই। তা হলে কে? সিদ্ধান্ত হল, প্রেসিডেন্সি কলেজের প্রাক্তনী, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠরত এক বলিয়ে-কইয়ে, ঝকঝকে তরুণ যুব সংগঠন ডিওয়াইএফ-এর সম্পাদক হবেন।জঙ্গি বাম ছাত্র আন্দোলনে তাঁকে কখনও দেখা না গেলেও প্রমোদ দাশগুপ্তর সেই আস্থাভাজন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকেই বেছে নেওয়া হল। পাঁচ দশক আগের সেই সম্মেলনে শহিদ মিনারে জ্যোতি বসুদের পাশাপাশি বক্তা ছিলেন বুদ্ধদেবও। রাজনীতির বৃহৎ মঞ্চে প্রথম বার। রাজনীতির দীর্ঘ যাত্রাপথে বুদ্ধদেবকে শেষ দেখা গিয়েছিল ২০১৯-এর লোকসভা ভোটের আগে, বামফ্রন্টের ব্রিগেড সমাবেশে। ভগ্নস্বাস্থ্য ও অসুস্থতা নিয়েও গাড়িতে অক্সিজেন সিলিন্ডার-সহ বুদ্ধদেব পৌঁছেছিলেন মঞ্চের পিছনে।

    সিওপিডি-র সমস্যায় জর্জরিত বুদ্ধদেব সে দিন গাড়িতে বসেও বক্তৃতা করতে পারেননি। বুদ্ধদেব কোনও দিন বিমান, শ্যামল, অনিলদের মতো সংগঠন পরিচালনা করেননি। তবে রাজনৈতিক বা মতাদর্শগত বিতর্কে দ্রুত অবস্থান নিতে পারতেন। জ্যোতিবাবুর প্রধানমন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাব নিয়ে বিতর্ক, ইউপিএ-ওয়ান সরকার থেকে সমর্থন প্রত্যাহার, ২০১৬-র বিধানসভা ভোটে বাম-কংগ্রেস জোট— কোনও বারই নিজের অবস্থান নিয়ে ধোঁয়াশা রাখেননি বুদ্ধদেব।

    বহু ক্ষেত্রে তাঁরই দেখানো পথেই শেষমেশ হেঁটেছে বঙ্গ সিপিএম। ১৯৮২-র বিধানসভা ভোটে কাশীপুরে হার। ১৯৮৭-তে যাদবপুর থেকে নির্বাচনে জিতে মন্ত্রিসভায় ফেরা। বুদ্ধদেব যে জ্যোতিবাবুর উত্তরসূরি হবেন, সেটা স্পষ্ট হতে শুরু করে নয়ের দশকের মাঝামাঝি। অশীতিপর জ্যোতিবাবুর ভার লাঘব করতে এবং প্রশাসনে বুদ্ধদেবের জায়গা মজবুত করতে ১৯৯৬-এ তথ্য ও সংস্কৃতির পাশাপাশি স্বরাষ্ট্র দপ্তরের আংশিক ভারও দেওয়া হয় তাঁকে।

    ১৯৯৮-এর লোকসভা ভোটে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সদ্য তৈরি তৃণমূলের চমকপ্রদ সাফল্যে স্পষ্ট হয়ে যায়, জ্যোতিবাবুর দীর্ঘ জমানার বিরুদ্ধে আমজনতার ক্ষোভ বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে স্বচ্ছ ভাবমূর্তির বুদ্ধদেবকে ১৯৯৯-এ রাউপ-মুখ্যমন্ত্রী করে সিপিএম। ৩৪ বছরের বাম জমানায় ওই একবারই উপ-মুখ্যমন্ত্রীর পদ তৈরি হয়েছিল। ২০০০-এ কলকাতা পুরসভায় তৃণমূলের জয়, জেলায় জেলায় মমতার সভা বাম জমানার পতনের সম্ভাবনা ডেকে আনে।

    আর তখনই ২০০০-এর শেষে মুখ্যমন্ত্রী হন বুদ্ধদেব। আসন কমলেও ২০০১-এর বিধানসভা নির্বাচনে বুদ্ধদেবের উপরেই আস্থা রাখে বাংলা। ২০০৬-এর ভোটে বামফ্রন্টের বিপুল জয় বুদ্ধদেবকে চালকের আসনে বসিয়ে দেয়। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কট্টরপন্থী শিবিরের সঙ্গে বুদ্ধদেবের সংঘাতে অধিকাংশ সময়ে পিছু হটেছেন তিনি। কখনও প্রকাশ কারাটদেরও পিছু হটতে হয়েছে। ২০১১-র বিধানসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশের দিনেই পরাজয়ের সম্পূর্ণ দায় নিজের ঘাড়ে নিয়ে পলিটব্যুরো থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন বুদ্ধদেব। পার্টি তা গ্রহণ করেনি।
  • Link to this news (এই সময়)