করোনা কালে নজরকাড়া সেবাকর্ম, মৃত চিকিৎসকের কথা মনে করছেন মধ্যমগ্রামের সহকর্মীরা
প্রতিদিন | ১৩ আগস্ট ২০২৪
অর্ণব দাস, বারাসত: আর জি কর হাসপাতালের তরুণী চিকিৎসকে যৌন নির্যাতন ও নৃশংস খুনের ঘটনা দেশজুড়ে তোলপাড় ফেলে দিয়েছে। তাঁর এই মর্মান্তিক পরিণতি কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না মধ্যমগ্রাম নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোস স্পেশালাইজড অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টারের স্বাস্থ্যকর্মীরা। কারণ, পুরসভা পরিচালিত মধ্যমগ্রাম মাতৃসদন বলে পরিচিত এই হাসপাতালেই কার্যত হাতেখড়ি হয়েছিল আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ (RG Kar Medical College) হাসপাতালের পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেনি চিকিৎসকের। করোনা কালে তাঁর সেবাকর্ম নজর কেড়েছিল সকলের। সেসব কথাই মনে পড়ছে তাঁর সহকর্মীদের।
২০১৯ সালের শেষ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত অর্থাৎ কোভিড (COVID-19) মহামারীর সময়ে মধ্যমগ্রামের ওই হাসপাতালে পরিষেবা দিয়েছিলেন পানিহাটির (Panihati)তরুণী চিকিৎসক। অতিমারীর সেই সময় একেবারে সামনে থেকে তাঁর লড়াই এখন মনে পড়ছে স্বাস্থ্যকর্মীদের। অনেক চিকিৎসকই তখন নিজেদের সুরক্ষার স্বার্থে ঘরবন্দি হয়েছিলেন। কিন্তু এই তরুণী চিকিৎসক নিয়মিত হাসপাতালে আসতেন অ্যাম্বুল্যান্সে চড়ে।
হাসপাতালের ইনচার্জ পঙ্কজকান্তি চন্দ্র বলেন, “এমবিবিএস করার পরেই উনি এই হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত হন। এমারজেন্সি, আইসিসিইউ-সহ জেনারেল ওয়ার্ডের দায়িত্ব সামলেছেন। কোভিডের সময়ও প্রতিদিনই হাসপাতালে এসেছে। তখনই আমরা দেখছি সে খুব শান্ত ও চুপচাপ স্বভাবের। অন ডিউটি অবস্থায় তাঁর সঙ্গে এমন ঘটনা ঘটে গেল, ভাবলেই শিহরন হচ্ছে। আমরা চাই অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক।”
হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার সুকেশ রায় বলেন, “কখনও কোনও চিকিৎসক আসতে দেরি করলে উনি ওয়ার্ড ছেড়ে যেতেন না। তাছাড়া রোগী বা তার পরিজনদের সঙ্গে তাঁর ব্যবহারের কোনও তুলনা হয় না।” এই খবর পাওয়ার পর থেকে রাতে ঠিক করে ঘুমাতে পারছেন না হাসপাতালের আইসিসিইউ-র (ICCU) নার্স সরমা দত্ত। কান্নাভাঙা গলায় তিনি বলেন, “ওঁর সঙ্গে বহুদিন কাজ করেছি। ব্যবহারের তুলনা হয়না। সর্বদাই পরিবারের সদস্যের মতোই আমাদের সঙ্গে মিশতেন। ওঁর হাতের লেখাও ছিল অসাধারণ।” মধ্যমগ্রাম (Madhyamgram)পুরসভার চেয়ারম্যান নিমাই ঘোষ জানিয়েছেন, ”২০২২ সালের মাঝামাঝি সময়ে এমডি পরীক্ষায় বসার জন্য চাকরি ছেড়ে দিয়েছিলেন পানিহাটির তরুণী চিকিৎসক। আমি প্রয়োজনে অনেকবার মাতৃসদনে গিয়েছিলাম, ওঁর সঙ্গে বেশ কয়েকবার কথাও হয়েছিল। সেগুলোই এখন মনে পড়ছে।”