ভোররাতে কাকে খুঁজতে আর জি করের একাধিক ওটিতে ঢুঁ মারে সঞ্জয়? প্রশ্ন তদন্তকারীদের
প্রতিদিন | ১৪ আগস্ট ২০২৪
অর্ণব আইচ: রাত সাড়ে তিনটের সময় আর জি কর হাসপাতালের (RG Kar Hospital) অপারেশন থিয়েটারে কেন ঢুঁ দেয় অভিযুক্ত সঞ্জয়? কেনই বা অত রাতে তার ট্রমা কেয়ারে যাওয়ার প্রয়োজন হল? কোনও মহিলার সন্ধানে, না কি পরিচিত কোনও চিকিৎসক বা ডাক্তারি ছাত্রকে খুঁজতে? সিবিআইয়ের হাতে তদন্তভার যাওয়ার আগে পর্যন্ত এই প্রশ্ন তুলেই তদন্ত করতে শুরু করে পুলিশ। একই সঙ্গে পুলিশের প্রশ্ন, আর জি কর হাসপাতালের সেমিনার হলের ভিতর মহিলা চিকিৎসকের দেহের খোঁজ পাওয়া ও পুলিশ পৌঁছনোর মধ্যবর্তী সময়ে কি তথ্য বা প্রমাণ লোপাট করা হয়? পুলিশের মতে, এই বিষয়গুলিও সিবিআই খতিয়ে দেখতে পারে।
কলকাতা পুলিশ ওয়েলফেয়ার কমিটির পক্ষে আর জি কর হাসপাতালে অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়ের সঙ্গে অন্য এক সিভিক ভলান্টিয়ারও পুলিশকর্মী ও তাঁদের পরিবারের রোগীদের দেখভাল করতেন। গত বৃহস্পতিবার রাতে সঞ্জয় ও ওই সিভিক ভলান্টিয়ার সোনাগাছির যৌনপল্লিতে প্রচণ্ড মদ্যপান করে। ওই সিভিক ভলান্টিয়ার পুলিশকে জানান, সোনাগাছি থেকে বের হওয়ার সময় যখন সঞ্জয় তাঁকে জানায় যে, সে এক রোগীকে দেখতে আর জি করের ট্রমা কেয়ারে যাবে, তখন তিনি রীতিমতো অবাক হয়ে যান। তখন রাত তিনটে বেজে গিয়েছে। কোনও রোগীর অবস্থা অতটা খারাপ ছিল না যে, তাঁকে রাত তিনটের পর ট্রমা কেয়ারে দেখতে যেতে হবে। তিনি আর হাসপাতালে না গিয়ে চতুর্থ ব্যাটালিয়নের ব্যারাকে ফিরে যান।
কিন্তু সঞ্জয়কে জেরা ও সিসিটিভির ফুটেজ পরীক্ষা করে পুলিশ জেনেছে, একবার ট্রমা কেয়ারে সঞ্জয় গিয়েছিল। কিন্তু তার লক্ষ্য ছিল হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটার। শুক্রবার ভোর সাড়ে তিনটের পর সঞ্জয় রায়কে একাধিক অপারেশন থিয়েটারের ভিতর ঢুকতে দেখা যায়। পুলিশকে প্রাথমিকভাবে সে জানায়, ওটিগুলিতে তার পরিচিত এক রোগীকে খুঁজছিল সে। কিন্তু পুলিশের মতে, অত রাতে কোনও রোগীকে খুব আপদকালীন পরিস্থিতি ছাড়া অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয় না। হাসপাতালে প্রতিনিয়ত যাতায়াতের কারণে সেই বিষয়টি খুব ভাল করেই জানত সঞ্জয়। সেই কারণেই পুলিশের প্রশ্ন, কাকে খুঁজতে অপারেশন থিয়েটারগুলিতে গিয়েছিল সে।
পুলিশের একাংশের মতে, অপারেশন থিয়েটারে কোনও রোগিনী অথবা মহিলা চিকিৎসক থাকলে তাঁদেরও ‘টার্গেট’ করতে পারত সঞ্জয়। যদিও তদন্ত শেষ করার আগে পর্যন্ত পুলিশের এও ধারণা, সঞ্জয় কোনও পরিচিত চিকিৎসক বা ডাক্তারি ছাত্রর খোঁজ করছিল। তাঁর সঙ্গে সঞ্জয়ের রাতে কী প্রয়োজন ছিল, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। তবে রাতে সিসিটিভির ফুটেজে সঞ্জয়কে কারও সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায়নি। হাসপাতালের তিনতলায় তাকে অনেকক্ষণ ঘোরাঘুরি করতে দেখা যায়। চারতলায় সেমিনার হলের ভিতরে ঢুকে সে মহিলা চিকিৎসককে কম্বল মুড়ি দিয়ে ঘুমোতে দেখে। এর পরই সে তাঁর উপর যৌন নির্যাতন চালিয়ে খুন করে। তবে খুনের ঘটনার প্রায় পাঁচ ঘণ্টা পর ওই তরুণীর দেহ হাসপাতালের চিকিৎসকরা উদ্ধার করেন। এর প্রায় এক ঘণ্টা পর টালা থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। ওই সময়ের মধ্যে তথ্য বা প্রমাণ সরানো হয়েছিল কি না, পুলিশ তা খতিয়ে দেখতে শুরু করে।
পুলিশ জানতে পারে, চিকিৎসকের দেহ উদ্ধারের পর হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ চেস্ট বিভাগেরই সহ সুপারকে নির্দেশ দেন, তরুণী চিকিৎসকের বাড়িতে ফোন করে জানাতে, তিনি আত্মঘাতী হয়েছেন। তখন প্রাক্তন অধ্যক্ষের ঘরে উপস্থিত ছিলেন অন্য এক চিকিৎসক। তিনি এই আচরণের প্রতিবাদ করে বলেন, দেহটি দেখেই বোঝা গিয়েছে যে, যৌন নির্যাতনের পর তাঁকে খুন করা হয়েছে। দেহের ময়নাতদন্ত চিকিৎসকদেরই করতে হবে। তবে কেন আত্মহত্যার তত্ত্ব খাড়া করা হচ্ছে? এই ব্যাপারে সহ-সুপারও কিছু বলতে গেলে তাঁকে থামিয়ে দেন তৎকালীন অধ্যক্ষ। ওই সহ-সুপারও পরিবারকে ফোন করে জানান, তাঁদের মেয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন। সিবিআই এই বিষয়গুলি খতিয়ে দেখতে পারে বলে জানিয়েছে পুলিশ।