নিরুফা খাতুন: সকাল ৭টা নাকি ৯টা? চিকিৎসকের মৃতদেহ উদ্ধারের সময় নিয়ে ধন্দে তদন্তকারীরা। গত ৯ আগস্ট আর জি কর হাসপাতালের সেমিনার হলে তরুণী চিকিৎসকের মৃতদেহটি সকাল ৯টা নাগাদ নজরে আসে বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল। তার পর সকাল ১০টা ১০ মিনিট নাগাদ টালা থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে আসেন। কিন্তু তদন্তে নেমে এই দেহ নজরে আসার সময়সীমা নিয়ে নয়া তথ্য হাতে পেয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই (CBI)। সিবিআই সূত্রে খবর, তিনতলায় সেমিনার হলে চিকিৎসকের দেহটি সকাল ৯টা নয়, ৭টার সময় দেখতে পাওয়া গিয়েছিল। হাসপাতালে ওই রাতে ডিউটিতে থাকা পড়ুয়া চিকিৎসকদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এই তথ্য পেয়েছেন তদন্তকারী আধিকারিকরা।
বৃহস্পতিবার ওই বিল্ডিংয়ে নাইট ডিউটিতে থাকা পড়ুয়া চিকিৎসকদের একাংশের বক্তব্য, ”রাতে ওই বিল্ডিংয়ে ছিলাম। সকাল সাতটা নাগাদ খবর পাই, সেমিনার হলে পিজিটি (PGT)দিদির মৃতদেহ পড়ে রয়েছে। আমরা তখন তিনতলা সেমিনার হলের দিকে যাই। ততক্ষণে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ চলে এসেছে।” পড়ুয়া চিকিৎসক সূত্রে খবর, পুলিশরা (Police) এসেছিলেন সাদা পোশাকে। তাঁদের কাউকে সেমিনার হলে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। এমনকি ইন্টার্ন-সহ যে চার পড়ুয়া চিকিৎসক ওই দিদির সঙ্গে সেই রাতে ডিউটি করছিলেন তাঁরাও খবর পেয়ে সাতটার দিকে ঘটনাস্থলে আসেন। যদি সকাল ১০টা ১০ মিনিটে স্থানীয় থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে আসেন। তাহলে সাদা পোশাকে সেমিনার রুমে কারা এসেছিলেন? তারা কেনই বা পড়ুয়াদের ঘটনাস্থলে ঢুকেত বাধা দেন? সেমিনার রুমে ভিতরে তদানীন্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষও হাজির ছিলেন বলে তাঁরা জানিয়েছেন। এদিকে মৃতের পরিবার জানিয়েছে, বেলা ১১টার দিকে মেয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে ফোনে করে জানানো হয়। দেহ নজরে আসার সময়ের মধ্যেই রহস্য লুকিয়ে আছে বলে তদন্তকারীরা মনে করছেন।
আর জি করে (RG Kar Hospital) চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় পরতে পরতে রহস্য তৈরি হয়েছে। ভোর চারটে থেকে সকাল ছটার মধ্যে চিকিৎসকের মৃত্যু হয়েছে। বলা হচ্ছে, সকাল ৯টায় দেহটি নজরে আসে। এতটা সময় কী কেউ সেমিনার হলে ঢোকেননি? ঘটনার পর প্রথমদিকে ওই বিল্ডিংয়ে নাইট ডিউটিতে থাকা চিকিৎসক পড়ুয়ারা এ ব্যপারে মুখে কুলুপ এঁটে ছিলেন একপ্রকার। তবে কেন্দ্রীয় এজেন্সি তদন্তের দায়িত্ব নেওয়ার পরেই তাঁদের মধ্যে অনেকেই আড়ালে আবডালে মুখ খুলতে শুরু করেছেন। পড়ুয়াদের ইঙ্গিত, প্রাক্তন অধ্যক্ষ ও উত্তরবঙ্গের এক প্রভাবশালী চিকিৎসকের দিকে। অর্থোপেডিকের ওই ইউনিটের এক পিজিটির অভিযোগ, টেবিলের নিচে মৃতদেহ পড়ে রয়েছে। আর পাশে বসে আলোচনা করেছেন প্রিন্সিপ্যাল স্যর, এমএসভিপি স্যর। এর মধ্যেই একটি গাড়ি হাজির হয় অ্যাকাডেমিক বিল্ডিংয়ে। নেমে আসেন উত্তরবঙ্গের এক ‘প্রভাবশালী চিকিৎসক’। বস্তুত, তাঁকেও সেমিনার রুমে ডেকে নেওয়া হয়। কাউকে কাউকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘স্যরকে বসতে চেয়ার দে’’ বা ‘‘স্যরকে সবটা খুলে বল।’’
নিহত চিকিৎসকের সঙ্গে হাসপাতালের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মধ্যে একটা ঝামেলা চলছিল বলেও জানা গিয়েছে। সেজন্য তাঁকে নানাভাবে মানসিক হেনস্তা করা হত। টানা ডিউটি (Duty) দেওয়া হত। তাঁদের অভিযোগ ভিত্তিহীনও নয়। যেদিন তরুণীর দেহ উদ্ধার হয় তার আগের দিন রাতে অর্থাৎ বৃহস্পতিবার নাইট ডিউটিতে ছিলেন। জানা গিয়েছে, টানা ৩৬ ঘন্টা ডিউটিতে ছিলেন। তাঁরা এও বলেন, ওই রাতে ওই চিকিৎসক দিদির সঙ্গে ডিউটিতে থাকা চার পড়ুয়া চিকিৎসকে নিয়েও নানা গুজব (Rumour) ছড়ানো হয়। অথচ সকাল সাতটার দিকে চিকিৎসক দিদির মৃত্যুর খবর পেয়ে তাঁরা ছুটে এসেছিল। কেউ কোথাও পালিয়ে যায়নি। এখনও সবাই আর জি করেই রয়েছেন। তদন্তে সহযোগিতাও করছেন।