• এবার লাই ডিটেক্টর টেস্ট ধৃত সিভিকের
    বর্তমান | ২০ আগস্ট ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: আর জি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ-খুনের ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়কে। কিন্তু কেন এই জঘন্যতম অপরাধ করল সে? নেপথ্যে কি বড়সড় ষড়যন্ত্র রয়েছে? এই সব প্রশ্নের উত্তর পেতে এবার ধৃতের ‘লাই ডিটেক্টর টেস্ট’ বা পলিগ্রাফ টেস্ট করবে সিবিআই। সোমবারই এব্যাপারে তাদের আবেদন মঞ্জুর হয়েছে শিয়ালদহ আদালতে। সঞ্জয় বারবার বয়ান বদল ও তথ্য গোপন করায় এই টেস্টের সিদ্ধান্ত। যদিও তা করা যাবে কি না, সেই বিষয়টি নির্ভর করছে ধৃতের উপর। তাকে সশরীরে হাজির করাতে হবে আদালতে। কারও ভয়ে বা চাপের মুখে সে এই টেস্টে রাজি হয়েছে কি না, সঞ্জয়ের কাছে জানতে চাইবেন বিচারক। অভিযুক্ত সিভিক সম্মতি দিলে চলতি সপ্তাহে তাকে লাই ডিটেক্টরের সামনে বসতে হতে পারে বলে সূত্রের খবর। ঘটনার সময় সে একা ছিল, না সঙ্গে আরও অনেকে— এই প্রশ্নের উত্তরই পলিগ্রাফের মাধ্যমে জানতে চায় তদন্তকারী সংস্থা। অফিসাররা নিশ্চিত হতে চাইছেন যে, অন্যদের আড়াল করতেই সঞ্জয়কে নিয়ে আসা হয়েছিল কি না। আর জি কর হাসপাতালের তৎকালীন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষও কি এই ষড়যন্ত্রে জড়িত? উত্তর জানতে মুখিয়ে কেন্দ্রীয় এজেন্সি।


    সন্দীপবাবু এদিনও সিবিআইয়ের জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হন। সেই পর্বে ফের সেমিনার হলের সামনের অংশ ভাঙার প্রসঙ্গ ওঠে। সূত্রের খবর, তদন্তকারীদের কাছে তিনি জানান, ছাত্র-ছাত্রীদের চাপে বাধ্য হয়ে এই কাজ শুরু করেন। কিন্তু ঘটনার পরপরই কেন তা হল, এর কোনও জুতসই ব্যাখ্যা সদ্য প্রাক্তন অধ্যক্ষ দিতে পারেননি বলে সিবিআইয়ের দাবি। তরুণীর মৃত্যুর সঠিক সময় নিয়েও কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা সংশয়ে। তদন্তের স্বার্থে তা জানা জরুরি। কিন্তু তা স্পষ্ট হচ্ছে না। বিষয়টির মধ্যে অনেক রহস্য লুকিয়ে। এজেন্সির ব্যাখ্যা, সিটের অফিসারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে ওই তরুণী রাতের খাবার খান রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ। বলা হচ্ছে, রাত তিনটে থেকে ভোর পাঁচটার মধ্যে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। অথচ সিভিক সঞ্জয় হাসপাতালে ঢুকেছিল ভোর চারটে নাগাদ। সে যদি ধর্ষক ও খুনি হয়, তাহলে মৃত্যুর সময় চারটের পর হবে। তাহলে রাত তিনটের কথা উঠছে কেন? তাহলে কি সঞ্জয়ের আগে অন্য কেউ ঘটনাস্থলে গিয়েছিল? সঞ্জয় গিয়ে পরে তার সঙ্গে যোগ দিয়েছে? বিষয়টি নিয়ে পারিপার্শ্বিক তথ্যপ্রমাণ জোগাড়ের কাজ চলছে। আরও একটি খটকা রয়ে গিয়েছে। তা হল, সঞ্জয় ভোর ৪.৩৫ বেরিয়ে যায় হাসপাতাল থেকে। একজন ব্যক্তির পক্ষে কি মাত্র আধঘণ্টায় এত কাণ্ড ঘটিয়ে বেরনো সম্ভব? ময়নাতদন্তের রিপোর্ট বলছে, শ্বাসরোধ করে ও গলা টিপে খুন করা হয়েছে তরুণীকে। তদন্তকারীদের প্রশ্ন, একজন কীভাবে একই সঙ্গে দু’টি কাজ করবে? বিশেষত মেয়েটি সুস্থ সবল ছিল। সেক্ষেত্রে বাধা তো আসবেই। ফলে জল্পনা আরও বেড়েছে। ঘটনার পর সঞ্জয় সোজা চতুর্থ ব্যাটালিয়ানের বারাকে যায় নাকি কারও সঙ্গে দেখা করে, সেটাও স্পষ্ট নয়। 


    নিহত তরুণীপ ময়নাতদন্ত হয়েছিল আর জি করেই। সেক্ষেত্রে সন্দীপবাবু কোনও প্রভাব খাটাননি তো? এই প্রশ্ন রয়েছে সিবিআইয়ের। প্রয়োজনে সন্দীপবাবুর পলিগ্রাফ টেস্টের ভাবনা-চিন্তা করা হচ্ছে। এদিন লালবাজারে গিয়ে সিসি ক্যামেরা ফুটেজ সংগ্রহ করে সিবিআই টিম। তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষও এই ঘটনা সংক্রান্ত কিছু নথি সিবিআইকে  জমা দিয়েছেন।
  • Link to this news (বর্তমান)