'চক্ষু প্রতিস্থাপনের কৃতিত্ব কিন্তু ওঁর'। মাস্ক দিয়ে মুখ ঢাকা তরুণ চিকিৎসককে টেনে সামনে আনলেন এক সিনিয়র ডাক্তার। অভিজ্ঞ চিকিৎসকের সংযোজন, 'ও আন্দোলন করছে। কিন্তু পরিষেবার সঙ্গে কোনও আপোস নয়।' জুনিয়র চিকিৎসক অবশ্য থেকেছেন মাস্কের আড়ালেই। তবে তাঁর সংযোজন, 'সেবাই পরম ধর্ম'।আরজি করের ঘটনায় সুবিচার এবং চিকিৎসকদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার জন্য কর্মবিরতির পথে হাঁটছেন জুনিয়র ডাক্তারদের একাংশ। তাতে অংশ নিয়েছেন মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের জুনিয়র চিকিৎসকদের একাংশও। কিন্তু, কর্মবিরতির মধ্যেই মেদিনীপুরে বিরল অপারেশনে যোগ দিলেন জুনিয়র চিকিৎসক দেবার্ঘ্য সেনগুপ্ত। প্রথমবারের জন্য মেদিনীপুরে সফলভাবে সম্পন্ন হল কেরাটোপ্লাস্টি! জুনিয়র চিকিৎসকদের স্বতঃপ্রণোদিত অংশগ্রহণকে স্বাগত জানাচ্ছেন সিনিয়র চিকিৎসকরা। অপারেশনের পর হাসপাতালের এক বর্ষীয়ান চিকিৎসকের সংযোজন, ‘আজকের হিরো দেবার্ঘ্যই’।
দুই বছর ধরে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে চক্ষু প্রতিস্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু, পাওয়া যাচ্ছিল না আই ডোনার। তবে রেটিনা প্রয়োজন এমন কিছু রোগীর তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছিল মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের চক্ষু বিভাগের তরফে।
গত বৃহস্পতিবার সাফল্যের নজির গড়েছে হাসপাতালটি। সিনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চক্ষু প্রতিস্থাপন অপারেশনে অংশ নেন আন্দোলনরত জুনিয়র চিকিৎসকও। মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের চক্ষু বিশেষজ্ঞ অনিন্দিতা মণ্ডলের নেতৃত্বে অপারেশন করেন ভিজিটিং সার্জেন সঞ্জীব কুমার পুরকাইত। অংশ নেন সিনিয়র রেসিডেন্ট দেবার্ঘ্য সেনগুপ্ত।
সম্প্রতি মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় এক প্রবীণের। তিনি চক্ষুদান করেছিলেন। এরপরেই হাসপাতালের তরফে সংরক্ষণ করা হয়েছিল তাঁর রেটিনা। হাসপাতালের চক্ষু বিভাগের তৈরি করা তালিকা অনুযায়ী দুই রোগীকে ডেকে পাঠানো হয় যাঁদের চক্ষুর প্রয়োজন রয়েছে। যাবতীয় পরীক্ষার পর বৃহস্পতিবার দুই রোগীর চক্ষু প্রতিস্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, চক্ষু বিভাগের ১৬ জন চিকিৎসকের বিশেষ দল এই দুই অপারেশনে অংশ নিয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন আন্দোলনরত জুনিয়র চিকিৎসকরা। এই অপারেশন সফল হয়। অপারেশন প্রসঙ্গে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের চক্ষু বিশেষজ্ঞ অনিন্দিতা মণ্ডল বলেন, 'সিনিয়র-জুনিয়র চিকিৎসক এবং নার্সরা মিলে এই অপারেশন সম্ভব হয়েছে। আন্দোলনের দাবিগুলিকে আমরা সমর্থন করছি। তবে এটাও ঠিক যে পরিষেবা দেওয়া আমাদের ধর্ম।' চিকিৎসক সঞ্জীব কুমার পুরকাইত বলেন, ‘দেবার্ঘ্য কিন্তু আজকের অপারেশনের হিরো।’ উল্লেখ্য, বুধবারই মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসকরা বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন।