• ‘বাহন’ অ্যাপনির্ভর বাইক, হেরোইন পাচারের নয়া কৌশল
    বর্তমান | ২৬ আগস্ট ২০২৪
  • স্বার্ণিক দাস, কলকাতা: গ্রাহকের ফোন, ‘প্যাকেজ ডেলিভারি আছে?’ অ্যাপ ক্যাব চালক, ‘কী আছে স্যার?’ গ্রাহক, ‘আপনি তা জিজ্ঞাসা করতে পারেন না।’ চালক, ‘ঠিক! কিন্তু মাসখানেক আগে আমার খুব খারাপ অভিজ্ঞতা হয়েছে। এখন খুব ভয়ে ভয়ে বাইক চালাচ্ছি। এক্তিয়ার না থাকলেও কি পাঠাচ্ছেন জিজ্ঞেস করে নিচ্ছি স্যার।’

    প্যাকেজ ডেলিভারি নিয়ে অ্যাপ নির্ভর বাইকচালকের এই কথাবার্তার পর কৌতূহল বৃদ্ধি পায়। কী অভিজ্ঞতা হয়েছিল চালকের? ঘটনার কথা শুনলে চোখ কপালে উঠবে সবার। চালকের বক্তব্য, ‘গিফটের বাক্সে পাচার করা হচ্ছে নিষিদ্ধ মাদক। শহরের এক প্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে গাঁজা, হেরোইন পৌঁছে দিতে অ্যাপনির্ভর বাইককে ‘বাহন’ হিসেবে ব্যবহার করছে ড্রাগ পেডলাররা। বাইকচালক সেই গিফট বক্স নিয়ে রওনা দিলেই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বুকিং করা ব্যক্তির ফোন। এখনও পর্যন্ত সরকারিভাবে কোনও থানায় এনিয়ে অভিযোগ দায়ের হয়নি বটে তবে বিষয়টি লালবাজারের কানে পৌঁছেছে। তারা মাদক কারবারীদের ফাঁদে ফেলতে ‘স্ক্যানার’ চালু করেছে।

    কীভাবে হচ্ছে মাদক পাচার? নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই চালক বলেন, ‘ফেব্রুয়ারি মাসে ভিআইপি বাজার এলাকা থেকে একটি বুকিং আসে। মোবাইলের স্ক্রিনে দেখায় ‘প্যাকেজ’ ডেলিভারি করতে হবে। তখন রাত সাড়ে আটটা বেজেছে। প্যাকেজ নিয়ে যেতে হবে সল্টলেকে। ডেলিভারির খরচ দেখাল ১৮০ টাকা। বুকিং নিলাম। রুবির কাছে ছিলাম। এরমধ্যে ফোন এল বুকিং পার্টির। ‘আপনি কতদূর?’ জানালাম, ‘মিনিট সাতেকের মধ্যে পৌঁছচ্ছি স্যার’। ভিআইপি বাজার পৌঁছে দেখলাম, কালো গেঞ্জি আর হাফ প্যান্ট পরাএক যুবক দাঁড়িয়ে। তাঁর হাতে সোনালি প্যাকেট করা ছোট গিফ্ট বক্স। তিনি ১৮০ টাকার জায়গায় ৫০০ টাকা দিলেন। শুধু বলেলেন, ‘জিনিসটা খুব সাবধানে পৌঁছে দিতে হবে।’ টাকা নিয়ে বাইক স্টার্ট করি। তবে সায়েন্স সিটি পেরতেই কেমন খচখচ করে উঠল মন। বেশি টাকা দিতে কেউ চায় না। কিন্তু ইনি কেন এক্সট্রা ৩২০ টাকা দিলেন? তারপর বাইক দাঁড় করিয়ে গিফ্ট প্যাকটি খুলতেই হাঁত কেঁপে ওঠে। প্যাকেটের ভিতরে গাঁজা ও হেরোইনের প্যাকেট।’

    চালক সঙ্গে সঙ্গে বুকিং বাতিল করার জন্য গ্রাহককে ফোন করেন। তবে একটানা সুইচড অফ টোন শুনতে পান। চালকের বক্তব্য, ‘এত ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম যে, পুলিসের কাছে যাওয়ার কথা মাথাতেই আসেনি। ফোন সুইচড অফ পেতেই বুঝে গিয়েছিলাম অ্যাপ বাইক ব্যবহার করা হয়েছে ড্রাগ ডেলিভারির জন্য। ঝামেলা এড়াতে বাক্সটি পৌঁছে দিয়েছিলাম।’

    অ্যাপ বাইকচালকদের একাংশের বক্তব্য, কালিকাপুর, রুবি, ভিআইপি বাজার, পঞ্চান্নগ্রাম এলাকাগুলি থেকে প্যাকেজ ডেলিভারির বুকিংয়ের প্রবণতা বেশি। রাত বাড়লে সেই প্রবণতা বেশি দেখা যায়। মাদক ‘পাচার’-এর বিষয়টি চালকদের মধ্যে চাউর হতেই অনেকেই প্যাকেজ বুকিং নিচ্ছেন না। কলকাতা পুলিস সূত্রে খবর, বিষয়টির তদন্ত চলছে। কোন এলাকা থেকে, কারা বুকিং করছেন তাঁর উপর লাগাতার নজরদারির ব্যবস্থাও করা হয়েছে।
  • Link to this news (বর্তমান)