জমিজটে আটকে গিরিডি ড্যাম প্রকল্প, প্রতি বর্ষায় ভোগান্তির শিকার বাংলা
প্রতিদিন | ৩১ আগস্ট ২০২৪
শেখর চন্দ্র, আসানসোল: গত ১৩ বছর আগে পরিকল্পনা করেও ডিভিসির ড্যাম তৈরি হয়নি ঝাড়খণ্ডের গিরিডিতে। মাইথন থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরে ওই ড্যাম তৈরি হয়ে গেলেই চাপ কমে যেত মাইথন বাঁধের। পশ্চিমবঙ্গে বন্যা ঠেকাতে এবং ঝাড়খণ্ডের সেচ ব্যবস্থার উন্নতিতে এক দশকের বেশি সময় ধরে আগেই গিরিডির বলপাহাড়িতে নতুন ড্যাম তৈরির কথা বলেছিল কেন্দ্রের অন্তর্গত সেন্ট্রাল ওয়াটার কমিশন। ৪০০০ কোটি টাকার প্রকল্প রিপোর্টও তৈরি হয়। কিন্তু আজ পর্যন্ত সে প্রকল্পের কোনও অগ্রগতিই হয়নি। ফলে বৃষ্টি বাড়লেই ডিভিসির ছাড়া জলে ফি-বছর ভাসছে বর্ধমান, হাওড়া, হুগলি। এই ঘটনার মধ্য দিয়েই ফের সামনে উঠে এল বাংলার বঞ্চিত হওয়ার আরও এক আখ্যান। যখন অতি বৃষ্টিতে উচ্চ দামোদর থেকে জল সরাসরি মাইথন ও পাঞ্চেতে পৌঁছচ্ছে। সেখান থেকে বর্ষার সময় অতিরিক্ত জল ছেড়ে দিতে হয়। সেই ছাড়া জলে পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া, হুগলিতে ভয়ঙ্কর বন্যা হয় প্রতি বছর। বলপাহাড়ি তৈরি হলে মাইথনে আসার আগেই নদীর অতিরিক্ত জল সেখানে ধরে রাখা যেত।
পলি জমে ধারণক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে মাইথন, পাঞ্চেত জলাধার থেকে বিপুল জল ছাড়াই বাংলায় ‘ম্যান মেড’ বন্যার (Man Made Flood) কারণ বলে চিহ্নিত করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গিরিডির ওই প্রকল্পে দুই রাজ্যের সঙ্গে কেন্দ্রেরও অর্থ বরাদ্দ করার কথা। কিন্তু অভিযোগ, তা নিয়ে দিল্লি উচ্চবাচ্য করেনি গত এক দশকে। ফলে বাংলায় বন্যা রোধের অন্যতম পরিকল্পনাও চলে গিয়েছে বিশ বাঁও জলে। এ নিয়ে অনেক বিশেষজ্ঞও একমত।
২০১২ সালে সেন্ট্রাল ওয়াটার কমিশন মারফৎ ডিভিসি (DVC)বলপাহাড়ির প্রোজেক্ট রিপোর্ট তৈরি করেছিল। তখন সেই প্রজেক্টের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ডিভিসির তৎকালীন এগজিকিউটিভ ডিরেক্টর (সিভিল) সত্যব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, প্রোজেক্ট রিপোর্ট অনুযায়ী বলপাহাড়ি জলাধার নির্মাণে ৪ হাজার কোটি টাকা খরচ ধরা হয়েছিল। কিন্তু এত দিনে সেই খরচও বেড়ে আড়াই গুণ হতে পারে। জানা গিয়েছে, রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তরফে প্রয়োজনীয় অনুমতিও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ঝাড়খণ্ড (Jharkhand) সরকারের পক্ষ থেকে অনুমতি পুরোপুরি আসেনি। জমি সংক্রান্ত সমস্যার জন্যই ঝাড়খণ্ড সরকার এই প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেনি বলে খবর।
ডিভিসি সূত্রে খবর, এখন অতিরিক্ত বৃষ্টিতে যে জল ছাড়া হয়, তা অযথাই নষ্ট হয়। সেটাও হত না। ঝাড়খণ্ডও উপকৃত হত সেচের জল পেয়ে। ২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনও ধরা হয়েছিল প্রকল্পের রূপরেখায়। ডিভিসি মাইথন ড্যাম (Dam) এগজিকিউটিভ ডিরেক্টর অনিল কুমার দাস বলেন, জলাধার তৈরিতে ঝাড়খণ্ডে ১৭ হাজার ৪২০ হেক্টর জমি প্রয়োজন। তাতে ৪৪টি গ্রামের তিন হাজার পরিবারকে সরানোর দরকারও হতে পারে। প্রধানত জমির সমস্যাতেই ঝাড়খণ্ড সরকার এখনও এই প্রকল্পে সবুজ সংকেত দেয়নি।
তিনি বলেন, এর সঙ্গে আইনশৃঙ্খলার প্রসঙ্গ, পুনর্বাসনের প্রশ্ন জড়িয়ে। মাইথন, পাঞ্চেতের পলি সরানো নিয়ে ডিভিসির ইঞ্জিনিয়ারদের বক্তব্য, পলি সরাতে গেলে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। পলি তুলে রাখার মতো জায়গাও নেই। এ রকম জলাধারের পলি পরিষ্কারের পূর্ব অভিজ্ঞতাও নেই এ দেশে। তার চেয়ে বন্যা রোধে হাতিয়ার হতে পারত বলপাহাড়ি। কিন্তু জমি জটে সেই কাজ না হওয়ায় বন্যায় ভুগতে হচ্ছে বঙ্গবাসীকে।