• একা সঞ্জয়ের নামেই চার্জশিট! বেনজির চাপ, মুখ রক্ষায় মরিয়া সিবিআই
    বর্তমান | ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, নয়াদিল্লি: বেনজির চাপে সিবিআই। আর জি কর মেডিক্যাল কলেজে তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের তদন্তের কিনারা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রত্যাশা আকাশছোঁয়া। অথচ কলকাতা পুলিস যাকে ঘটনার পরদিনই গ্রেপ্তার করেছে, সেই সঞ্জয় রায় ছাড়া আর কাউকে ধরতে পারেনি কেন্দ্রীয় এজেন্সি। এই কাণ্ডে কি আরও কেউ জড়িত? এরকম কোনও এভিডেন্স অথবা ক্লু এখনও হাতে আসেনি সিবিআইয়ের। আর জি কর মেডিক্যাল কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে চলছে দুর্নীতি, কিংবা ওই ঘটনার পর প্রশাসনিক স্তরে অসঙ্গতি, সাক্ষ্যপ্রমাণ লোপাট হয়েছে কি না—এসবের তদন্ত।  কিন্তু মানুষ চায় জঘন্য ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের কিনারা হোক সর্বাগ্রে। এই নিয়ে প্রবল চাপের মুখে মুখরক্ষায় মরিয়া হয়ে উঠেছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। এজেন্সি সূত্রের খবর, এই ঘটনার তদন্ত চূড়ান্ত পর্যায়ে। জেরা ও জিজ্ঞাসাবাদ পর্ব প্রায় সমাপ্ত। এবং শেষ পর্যন্ত একা সঞ্জয় রায়ের বিরুদ্ধেই ধর্ষণ ও হত্যার চার্জশিট দিতে চলেছে সিবিআই। সেই প্রক্রিয়াও শুরু হবে শীঘ্রই। 

    এজেন্সি সূত্রের খবর, নির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণ অথবা সাক্ষ্য ছাড়া যাকে তাকে গ্রেপ্তার করা হবে না। কেন? কারণ, এরকম একটি হাই ভোল্টেজ মামলায় অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আদালতে অপরাধ প্রমাণ করতে না পারলে চরম অস্বস্তি তৈরি হবে। তাই আর জি কর কাণ্ডে অতিরিক্ত সতর্কতা নিতে চাইছে সিবিআই। ধর্ষণ ও হত্যার মামলায় ৬০ দিনের মধ্যে চার্জশিট দিতে হবে অভিযুক্তকে। ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৬৬ নম্বর ধারা অনুযায়ী এটাই এখন নিয়ম। আইনের কঠোর নির্দেশিকার কারণেই আপাতত যাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, সেই সঞ্জয়ের বিরুদ্ধেই দ্রুত চার্জশিট দিতে চা‌ইছেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারীরা। ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগ ছাড়াও তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্যপ্রমাণ লোপাটের ধারাও দেওয়া হচ্ছে বলে খবর। এরপর যদি এই মামলায় আরও কেউ গ্রেপ্তার হয়, সেক্ষেত্রে সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিটের কথা ভাবা হয়েছে।

    তবে সবথেকে বড় যে প্রশ্নটি সামনে এসেছে, তা হল, ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয়ের জেরা কি তাহলে শেষ? সিবিআই সূত্রে জানা যাচ্ছে, সেই পর্ব প্রায় সমাপ্ত। সেই কারণেই আদালতে পরপর দু’বার সঞ্জয়কে হেফাজতে নিতে চায়নি তারা। নিছক জামিনের আবেদনের বিরোধিতা করেই সিবিআই আইনজীবী নিরস্ত হচ্ছেন। শুক্রবার তাই আবার ১৪ দিনের জেল হেফাজতে পাঠানো হয়েছে তাকে। 

    যদিও সিবিআইয়ের কাছে অন্যতম বড় মাথাব্যথা এখন সঞ্জয়ের অবস্থান বদল। প্রাথমিকভাবে জানা যাচ্ছিল, সে অপরাধ স্বীকার করেছে। কিন্তু এখন সঞ্জয় নিজেকে নির্দোষ বলেই জানিয়েছে তার আইনজীবীকে। অর্থাৎ, আদালতে সে ‘নট গিল্টি’ আপিল করবে। সুতরাং, সিবিআই চার্জশিট জমা দিলেও আদালতে তাদেরই প্রমাণ করতে হবে যে, সঞ্জয়ই ধর্ষক এবং হত্যাকারী। এই অভিযোগ তথা সম্ভাব্য চার্জের সপক্ষে পারিপার্শ্বিক প্রমাণ ছাড়াও আদালতে জমা দিতে হবে প্রত্যক্ষ কিছু প্রমাণ এবং মোটিভের প্রামাণ্য নথি। 

    প্রশ্ন হল, বিগত ২৮ দিনে কতটা তথ্যপ্রমাণ একজোট করতে পেরেছে সিবিআই? পারিপার্শ্বিক তথ্যপ্রমাণ যথেষ্ট নয়। বহু মামলায় অভিযুক্তরা মুক্তি পেয়ে গিয়েছে। সেই কারণে ধর্ষণ ও হত্যা তদন্তের চার্জ ফ্রেমের ক্ষেত্রে কোনওভাবেই ফাঁক রাখতে চা‌ইছে না সিবিআই।
  • Link to this news (বর্তমান)