• কনস্টেবল পদে কর্মরত বাংলাদেশি মহিলা! কলকাতা পুলিস কমিশনারকে তদন্তের নির্দেশ হাইকোর্টের
    বর্তমান | ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • শুভঙ্কর বসু, কলকাতা: ছাত্র আন্দোলনের জেরে গদি ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন শেখ হাসিনা। তারপর থেকেই বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক আন্তর্জাতিক রাজনীতির আঙিনায় চর্চার কারণ হয়ে উঠেছে। আর এসবের মাঝেই এবার চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এল। কলকাতা পুলিসে মহিলা কনস্টেবল পদে নাকি কর্মরত এক বাংলাদেশি নাগরিক। যার জেরে এবার খোদ কলকাতা পুলিস কমিশনারকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। 

    নিছক জমি বিবাদকে কেন্দ্র করে কেঁচো খুড়তে গিয়ে এই কেউটের সন্ধান মিলেছে বলে দাবি করেছেন মামলাকারী তথা নদীয়ার গাংনাপুরের বাসিন্দা শুভঙ্কর সরকার।  তাঁর অভিযোগ, সুতপা সিংহ নামে এক বাংলাদেশি মহিলা এদেশে এসে বিভিন্ন নথি জাল করে কলকাতা পুলিসে কনস্টেবল পদে চাকরি পেয়ে গিয়েছেন। শুভঙ্করের দাবি, গাংনাপুর থানা এলাকায় দেবগ্রামের মাঠের পাড়া এলাকায় বেশ কিছুটা জমি-সহ তাঁর বাড়ি রয়েছে। অভিযোগ, সেই জমির পাশেই সুতপার বাবা প্রমথ সিংহ’র জমি রয়েছে। শাসক দলের স্থানীয় বেশ কয়েকজন নেতার সঙ্গে যোগসাজশ করে মামলাকারীর জমি হাতানোর ছক কষেছিল প্রমথ। এরপরই প্রমথ সম্পর্কে খোঁজ খবর শুরু করেন মামলাকারী। তাঁর দাবি, রাজ্য নির্বাচনী কার্যালয়ে তথ্য জানার অধিকার আইনে আবেদন করার পর তিনি জানতে পারেন, বাংলাদেশ থেকে এদেশে আসার পর ২০১৪ সাল নাগাদ দীনবন্ধু নামে এক ব্যক্তিকে বাবা সাজিয়ে প্রমথ সিংহ ভোটার তালিকায় নাম তোলেন। পরে বাবার নাম সংশোধন করেন। এবার তাঁর ভোটার কার্ডের সূত্রে একে একে তাঁর পরিবারের সকলেই ভোটার তালিকায় নাম তোলেন ও রানাঘাট দক্ষিণ কেন্দ্রে ভোটার হয়ে যান। অভিযোগ, পরবর্তীতে সেই ‘ভুয়ো’ ভোটার কার্ড ও অন্য তথ্য দাখিল করে কলকাতা পুলিসে চাকরিও পেয়ে গিয়েছেন সুতপা। 

    বিষয়টি জানার পরই ভোটার তালিকার যাবতীয় তথ্য-সহ জেলা নির্বাচনী কার্যালয় থেকে শুরু করে পুলিস সুপার সহ একাধিক জায়গায় অভিযোগ জানান শুভঙ্কর। অভিযোগের ভিত্তিতে প্রমথ সহ গোটা পরিবারকে শুনানি বা ‘হিয়ারিং’-এর জন্য তলব করেন রানাঘাট দক্ষিণ কেন্দ্রের ইলেকশন রেজিস্ট্রেশন অফিসার। মামলাকারীর অভিযোগ, ২০২৩ সালের ২৪ মে মাসে তাঁদের হিয়ারিং হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই শুভঙ্করকে একের পর মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়। এবং গ্রেপ্তার করা হয়। বর্তমানে জামিনে মুক্ত রয়েছেন রেল কর্মী শুভঙ্কর। তাঁর আরও অভিযোগ, স্থানীয় তৃণমূল নেতারা তাঁকে এখনও খুনের হুমকি দিচ্ছে। ফলে তিনি বাড়ি ফিরতে পারছেন না। 

    ঘটনার বাধ্য হয়ে শেষে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন তিনি। সম্প্রতি বিচারপতি শম্পা সরকারের এজলাসে মামলাটি শুনানির জন্য উঠলে যাবতীয় বৃত্তান্ত তুলে ধরেন শুভঙ্করের আইনজীবী রাজা বিশ্বাস ও অভিজিৎ সরকার। প্রমথ, সুতপা সহ তাঁর গোটা পরিবারকে মামলায় পক্ষভুক্ত করা হলেও, তাদের তরফে কোনও আইনজীবী এজলাসে উপস্থিত ছিলেন না। গোটা বৃত্তান্ত শোনার পর বিচারপতি সরকার নির্দেশে জানিয়েছেন, বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করবেন কলকাতার পুলিস কমিশনার। যাবতীয় নথি যাচাই করে সবপক্ষের বক্তব্য শুনে এব্যপারে সিদ্ধান্ত নিতে হবে তাঁকে। পাশাপাশি রানাঘাট দক্ষিণ কেন্দ্রের ইলেকশন রেজিস্ট্রেশন অফিসারকে বিচারপতির নির্দেশ, অভিযুক্তদের পরিচিতি প্রমাণের শেষ সুযোগ দিয়ে, ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ দেওয়ার বিষয়টি চার মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে হবে।
  • Link to this news (বর্তমান)