• শিল্পীকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে পাঁচ লক্ষ টাকা আদায়
    বর্তমান | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • ইন্দ্রজিৎ রায়, বোলপুর: সিবিআই পরিচয়ে নামী সঙ্গীত শিল্পীকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে সাড়ে পাঁচ লক্ষ টাকা লুঠ করল সাইবার অপরাধীরা। ঘটনাটি ঘটেছে শান্তিনিকেতনের পূর্বপল্লিতে। ঘটনায় অত্যন্ত আতঙ্কিত ওই সঙ্গীত শিল্পী সুনিধি নায়েক। তিনি বিশ্বভারতীর সঙ্গীত ভবনের প্রাক্তন ছাত্রী। তাঁর বাড়ি আসানসোল হলেও কর্মসূত্রে তিনি শান্তিনিকেতনের পূর্বপল্লিতে একটি ভাড়াবাড়িতে থাকতেন। যেদিন ঘটনাটা ঘটেছিল সেদিন তিনি একা ছিলেন। তাঁর দাবি, বাড়ির বাইরে অজ্ঞাত পরিচয় মানুষজনদের ঘোরাফেরা করতে দেখেছেন। দুষ্কৃতীরা তাঁকে সিবিআই পরিচয় দিয়ে ভিডিও কলের মাধ্যমে প্রায় গোটা দিন ‘হোম অ্যারেস্ট’ করে রেখেছিল। এরপর তাঁকে ও তাঁর বাবাকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে অনলাইন মাধ্যমে সাড়ে পাঁচ লক্ষ টাকা আদায় করে সাইবার দুষ্কৃতীরা। তাৎপর্যপূর্ণভাবে তাঁর ভাড়া বাড়ির ১০০ মিটারের মধ্যে রয়েছে শান্তিনিকেতন থানা ও এসডিপিও অফিস। ‌ ফলে, নতুন ধরণের এই অপরাধের বিষয়টি জানাজানি হতেই শান্তিনিকেতনে তীব্র চঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত শুরু করেছে শান্তিনিকেতন থানা।

    সুনিধি সঙ্গীত ভবনে রবীন্দ্র সঙ্গীত নিয়ে পড়াশোনা করেছিলেন। সঙ্গীতের জগতে যথেষ্ট সুনাম অর্জন করেছেন। দেশ-বিদেশে তাঁর খ্যাতিও রয়েছে। নিজের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিকড়ের টানে মাঝে মাঝেই থাকতেন শান্তিনিকেতনে। এর জন্য তিনি পূর্বপল্লিতে একটি বাড়ি ভাড়া নিয়েছিলেন। ঘটনাটি ঘটে মঙ্গলবার‌ বিকেলে। ওই সময় একটি অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন করে তাঁকে হুমকির সুরে বলা হয়, ‘সিবিআই থেকে বলছি। আপনার বিরুদ্ধে ব্যাঙ্কের আর্থিক তছরূপের অভিযোগ রয়েছে। ভিডিও কলের মাধ্যমে আপনাকে হোম অ্যারেস্ট করা হল। ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সি আপনার উপর নজরদারি চালাচ্ছে। চালাকি করলেই বিপদ। আপনাকে ও আপনার বাবা নিধিরাম নায়েককে প্রয়োজনে মেরে ফেলতেও আমরা পিছপা হব না। আপনার আসানসোলের বাড়ির সামনেও আপনার বাবার উপর নজরদারি চালানো হচ্ছে।’ কথাগুলো শুনে অত্যন্ত আতঙ্কিত ও কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েন সুনিধি। কিছু পরেই অ্যাকাউন্টে যত টাকা রয়েছে, তার পুরোটাই পাঠানোর জন্য তাঁকে নির্দেশ দেয় দুষ্কৃতীরা। ‌বাবা ও নিজের প্রাণ বাঁচাতে নির্দেশ কার্যকর করেন সুনিধি। দুষ্কৃতীদের কথামতো তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে প্রায় সাড়ে পাঁচ লক্ষ টাকা তাদের দেওয়া অ্যাকাউন্ট নম্বরে তিনি পাঠিয়ে দেন। ‌ টাকা পেতেই দুষ্কৃতীরা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। 

    বাড়ির ‌বাইরে দুষ্কৃতীরা অপেক্ষা করছে, এই আশঙ্কায় সুনিধি বেরোনোর সাহস পাননি। কোনওক্রমে স্থানীয় বন্ধুদের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করেন তিনি। গভীর রাতে শান্তিনিকেতন থানায় গিয়ে অভিযোগ জানান। তাৎপর্যপূর্ণভাবে সাইবার অপরাধ বেড়ে চলার কারণে বুধবারই শান্তিনিকেতনের শ্যামবাটি ক্যানাল ব্রিজে সাইবার থানার সূচনা করে বীরভূম জেলা পুলিস প্রশাসন। আর তার আগের দিন বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি সুনিধির সঙ্গে ঘটে। সুনিধি বলেন ‘দুষ্কৃতীরা যেভাবে কথা বলেছিল তাতে কোনওভাবেই মনে হয়নি, ওরা অপরাধমূলক কাজের জন্য যুক্ত। ওদের দাবি ছিল, আমার ক্রেডিট কার্ড থেকে আর্থিক তছরূপ হয়েছে।‌ দেশের কয়েকশো কোটি টাকা নিয়ে পালিয়ে যাওয়া ব্যবসায়ীর সঙ্গে এর যোগ রয়েছে। সেজন্য বাবা ও আমার ওপর নজরদারি রেখেছে পুলিস। চালাকি করা হলে প্রাণনাশেরও হুমকি দেওয়া হয়। এটা বলার পর থেকেই আমি উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ি। তারপরেই হুমকি দিয়ে ওরা আমার অ্যাকাউন্ট থেকে সাড়ে পাঁচ লক্ষ টাকা আদায় করে।’ সুনিধির অভিযোগ পাওয়ার পরই নড়েচড়ে বসেছে শান্তিনিকেতন থানা। সঙ্গীত শিল্পীর মোবাইলে আসা ফোন নম্বরের সূত্র ধরে তদন্ত শুরু হয়েছে।  -নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)