অতি বাম জুনিয়র ডাক্তারদের একগুঁয়েমিতে বিরক্ত সিনিয়ররা
প্রতিদিন | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪
স্টাফ রিপোর্টার: টানা ৩৫দিন রাস্তায় থেকে আন্দোলনই সার। উলটে হাতে গোনা কয়েকজন অতিবাম জুনিয়র চিকিৎসকের জন্যই আলোচনার রাস্তা বন্ধ হয়ে গেল। রাতে জুনিয়র চিকিৎসকদের প্রায় সবাই এমনই অভিযোগ তুলেছেন। তাঁদের অভিযোগ, অভয়ার নৃশংস মৃতু্যর বিচার নয়। ক্ষুদ্র দলীয় রাজনৈতিক স্বার্থপূরণ করতেই শনিবার দিনভর আলোচনার নাটক করেছেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। মুষ্টিমেয় কট্টর বামপন্থী জুনিয়র এদিনের ঘটনার নেপথ্যে রয়েছে বলে সরাসরি অভিযোগ উঠেছ। প্রশ্ন উঠেছে, আদতে তাঁদের কতটা সদিচ্ছা রয়েছে।
শনিবার দুপুর একটা পাঁচ মিনিট নাগাদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সল্টলেকের ধরনা মঞ্চে হাজির হন। গাড়ি থেকে নেমে হেঁটে সটান বসে পড়েন ধরনা মঞ্চে। এতাবৎ কালে দেশের কোনও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বিক্ষোভকারীদের পাশে বসে তাঁদের আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়েছেন এমনটা দেখা যায়নি। বস্তুত, গণ আন্দোলন থেকে উঠে আসা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জুনিয়র চিকিৎসকদের সেই কথাটাই এদিন আবারও স্মরণ করিয়ে দেন। তিনি বলেন,”ছাত্র আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে আমি উঠে এসেছি। তাই আপনাদের বিরুদ্ধে কোনও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে না।” অভয় দিয়ে বলেছেন,‘‘নিশ্চিন্তে কাজে ফিরে অাসুন।’’
তখন কিছুদুরে দাঁড়িয়ে থাকা মেদিনীপুর, বর্ধমান বা বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজের ইন্টার্নদের মধ্যে একরাশ বিস্ময়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ধরনা মঞ্চ থেকে চলে যেতেই মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের রবিশঙ্কর পাল ক্রমশ পিছন দিকে হাঁটতে শুরু করেন। বস্তুত, রবিশঙ্কর যেখান থেকে শুরু করেছিল মুখ্যমন্ত্রী ধরনা মঞ্চ ছেড়ে চলে যাওয়ার পর তা ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ল বাকিদের মধ্যে। জেলার মেডিক্যাল পড়ুয়াদের একটা বড় অংশ ব্যাগপত্তর গুটিয়ে বাড়িমুখো। বস্তুত, এই সময় থেকেই কার্যত তিন থেকে চার টুকরো জুনিয়র চিকিৎসকদের সংগঠন।
দুপুর ১টা পাঁচ থেকে মেল পালটা মেল করে সন্ধে সাড়ে ছ’টা থেকে রাত ন’টা পর্যন্ত কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দে্যাপাধ্যায়ের বাড়ির বাইরে নিজেরা ভিজেছেন। মুখ্যমন্ত্রীকে বাধ্য করেছেন ভিজতে। বস্তুত, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যতই মানবিক হয়েছেন, তাঁদের ভাই-বোন বলে সম্বোধন করেছেন ততই তাঁরা একগুঁয়ে হয়েছে। রাজ্যের প্রবীন চিকিৎসক মহলও জুনিয়রদের এমন আচরণে ক্ষুব্ধ-বিরক্ত। তাঁদের স্পষ্ট অভিযোগ, বিরোধী রাজনৈতিক দলও গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রীকে এমনভাবে অসম্মান করেনি। অভিযোগের তির ডা.রুমেলিকা কুমার, ডা.অর্ণব মুখোপাধ্যায়ের মতো উগ্র বাম চিকিৎসকের দিকে।
চিকিৎসকদের এদিনের আচরণের তীব্র সমালোচনা করেছে বিভিন্ন চিকিৎসক সংগঠন। প্রবীন চিকিৎসক ডা.সুকুমার মুখোপাধ্যায় এদিনের ঘটনায় অত্যন্ত হতাশ। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেছেন,”এমন একগুঁয়েমি হয়ে লাভটা কী হল? সুপ্রিম কোর্টে এই ঘটনার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না তো? ভেবেছিলাম রাতে সমস্যা মিটবে। কিন্তু অত্যন্ত হতাশ।” সার্ভিস ডক্টর্স ফোরামের পক্ষ থেকে ডা.সজল বিশ্বাস আক্ষেপ করে বলেছেন,”আড়াই ঘণ্টা মুখ্যমন্ত্রী বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে ভিজেছেন। বার বার অনুরোধ করেছেন। অন্তত সৌজন্য-ভদ্রতা দেখিয়ে আলোচনায় বসতে পারত জুনিয়ররা। কিন্তু সেই পথেই হাঁটেনি তাঁরা। অত্যন্ত হতাশাজনক।’’ বস্তুত, এবার জুনিয়র চিকিৎসকরা কোন পথে আইনি জট কাটাতে পারে সেটাই দেখার।