• ফেরাতে পারল না সুপ্রিম কোর্টও, ‘ফের বৈঠক চাই, অবস্থান চলবে’, ভোগান্তি অব্যাহত আম জনতার
    বর্তমান | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, নয়াদিল্লি, কলকাতা ও বিধাননগর: মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সদিচ্ছা এবং সুপ্রিম কোর্ট পাশে দাঁড়িয়ে যাওয়ার পরও কর্মবিরতি উঠল না। দুপুর থেকে দফায় দফায় বৈঠক, আর তারপর রাতে ‘জিবি’। আশা-অপেক্ষাই সার। কাজে না ফেরার সিদ্ধান্তেই অনড় থেকে গেলেন আন্দোলনকারী ডাক্তার-পড়ুয়ারা। দীর্ঘ বৈঠকের পর সাংবাদিকদের তাঁরা জানালেন, অবস্থান চলবে। স্বাস্থ্যসচিবের পদত্যাগ, নিরাপত্তা ইস্যুতে ফের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁরা বৈঠক করতে চান। আজ, বুধবার সকালে জুনিয়র চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে এব্যাপারে ই-মেল পাঠানো হবে।

    অথচ, সুপ্রিম কোর্টও মঙ্গলবার জুনিয়র ডাক্তারদের নিরাপত্তার দাবি এবং কর্মবিরতিকে সহানুভূতির সঙ্গেই দেখেছিল। এসবের আগে অবশ্য স্বাস্থ্যভবন সংলগ্ন জলট্যাঙ্কের সামনে চলল জিবির পর জিবি। মানে জেনারেল বডি মিটিং। মনে হচ্ছিল, খানিকবাদেই উঠে যাবে কর্মবিরতি। কিন্তু তা হতেও মাঝরাত পেরিয়ে গেল। এর ভিত অবশ্য এদিন খানিকটা গড়েছে সুপ্রিম কোর্টও। সওয়াল-জবাবে রাজ্য সরকারের আইনজীবী কপিল সিবাল বারবার তুলেছেন সোমবারের বৈঠকের কথা। বলেছেন, এবার অবিলম্বে কর্মবিরতি তুলে নেওয়াটাই কাম্য। তারপরও অবশ্য প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চ এব্যাপারে সরাসরি হস্তক্ষেপ করতে চায়নি। বরং জানানো হয়, ‘গত ৯ সেপ্টেম্বরের নির্দেশ বদলাচ্ছি না।’ সেখানে বলা হয়েছিল, ১০ তারিখ বিকেল ৫টার মধ্যে আন্দোলনরত চিকিৎসকদের কাজে ফিরতে হবে। না হলে রাজ্য সরকার আইন মোতাবেক ব্যবস্থা নিতে পারে। যদিও মমতা আগেই বার্তা দিয়েছেন, কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না। দিনের শেষে অবশ্য প্রধান বিচারপতি গুরুত্ব দিয়েছেন চিকিৎসকদের মতকেই। তিনদিনের মধ্যে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজের নিরাপত্তা সংক্রান্ত যাবতীয় ব্যবস্থা সম্পূর্ণ করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। ৪১৫টি সিসিটিভি ক্যামেরার মধ্যে কেন এখনও পর্যন্ত মাত্র ৩৬টি বসেছে, তা নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় রাজ্যকে। ‘রাত্তিরের সাথী’ প্রকল্পে বেসরকারি এজেন্সির চুক্তিভিত্তিক রক্ষী নিয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করেন প্রধান বিচারপতি। এমনকী মহিলা চিকিৎসকদের রাতের ডিউটিতে না রাখার সরকারি বিজ্ঞপ্তি নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়। এর প্রেক্ষিতে আদালতের মন্তব্য, ‘মহিলারা আপনাদের থেকে কোনও ছাড় চায় না। নিরাপত্তা চায়। সমানাধিকার চায়। নিরাপত্তা নিশ্চিত—ডাক্তারদের মনে এই আস্থা তৈরি করতে হবে রাজ্যকেই।’ নিরাপত্তা ইস্যুতে এদিন সিবাল ও জুনিয়র ডাক্তারদের আইনজীবী ইন্দিরা জয়সিংয়ের মধ্যে বাদানুবাদ হয়। ইন্দিরা বলেন, ‘সরকার তো নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই পারছে না। নিরাপত্তা নিশ্চিত করলেই কাজে ফিরবেন জুনিয়র ডাক্তাররা।’ কিন্তু সেটা কবে? ইন্দিরা বলেন, ‘এখনই বলা যাচ্ছে না।’ কিন্তু এতে কি চিকিৎসা পরিষেবায় ক্ষতি হচ্ছে না? জানতে চান প্রধান বিচারপতি। সিনিয়র ডাক্তারদের পক্ষে আইনজীবী করুণা নন্দীর জবাব, ‘রাজ্য সরকার আদালতকে বিভ্রান্ত করছে। জুনিয়ররা আন্দোলন করছেন বলে সিনিয়র ডাক্তাররা ওভার টাইম করছেন। ডাবল শিফটে ডিউটি করছেন।’ তখন কোর্টে উপস্থিত স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণ স্বরূপ নিগমও। প্রধান বিচারপতির পাল্টা প্রশ্ন ছিল, ‘আপনারা কি গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারেন যে, সবই স্বাভাবিক চলছে?’ জবাব মেলেনি। 

    এদিন দুপুর থেকেই দেখা যাচ্ছিল—সাধারণ আন্দোলনকারীদের মধ্যে কাজে ফেরার ইচ্ছা প্রবল হয়ে উঠেছে। তাঁরা বলছেন, ‘আমরা তো কাজে ফিরতেই চাই। অনেকগুলো দাবি তো রাজ্য মেনেও নিয়েছে।’ কিন্তু তাতেও কাটল না অচলাবস্থা। মধ্যরাত পর্যন্ত সাধারণ মানুষকে উৎকণ্ঠায় রেখেও উঠল না কর্মবিরতি। অর্থাৎ, ভোগান্তি অব্যাহত রাজ্যবাসীর।
  • Link to this news (বর্তমান)