নিজস্ব প্রতিনিধি, বাঁকুড়া: বেআইনি বালি খাদানের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করল বাঁকুড়া জেলা ভূমিদপ্তর। তদন্ত চালিয়ে বেআইনি খাদানের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে বাঁকুড়ার অতিরিক্ত জেলাশাসক তথা জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক বিবেক দত্তাত্রেয় ভাসমে জানিয়েছেন। বাঁকুড়া সদর থানা এলাকায় গন্ধেশ্বরী ও দ্বারকেশ্বর নদ থেকে বালি পাচারের রমরমা কারবার চলছে। শুক্রবার ‘বর্তমান’ পত্রিকায় এই খবর প্রকাশের পরই জেলা প্রশাসন তথা ভূমিদপ্তর নড়েচড়ে বসে। প্রাথমিক খোঁজখবরে আধিকারিকরা বালি পাচারের ব্যাপারে বেশকিছু তথ্য পেয়েছেন। তারপরেই ওই তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়। বাঁকুড়ার পাশাপাশি জেলার ওন্দা, বড়জোড়া, শালতোড়া, মেজিয়া, কোতুলপুর, তালডাংরা সহ একাধিক থানা এলাকায় বেআইনি বালি খাদান রয়েছে বলে জেলা ভূমিদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে। সম্প্রতি শালতোড়া, তালডাংরা ও কোতুলপুর থানা এলাকার বেআইনি খাদান নিয়ে নবান্নে লিখিত অভিযোগ জমা পড়ে। প্রশাসন সূত্রে খবর, অভিযোগ পাওয়ার পর রাজ্য সরকারের তরফেও বিষয়টি নিয়ে খোঁজখবর শুরু হয়েছে।
অতিরিক্ত জেলাশাসক(ভূমি ও ভূমি সংস্কার) বলেন, বাঁকুড়া সদর থানা এলাকায় বেআইনি বালি পাচার নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জেলার অন্যান্য থানা এলাকাতেও নজরদারি শুরুর ব্যাপারে দপ্তরের আধিকারিকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, বাঁকুড়া শহরের চারপাশে গন্ধেশ্বরী নদী ও দ্বারকেশ্বর নদ থেকে বালি পাচার করা হচ্ছে বলে বেশ কিছুদিন ধরেই অভিযোগ উঠছিল। বৃহস্পতিবার গন্ধেশ্বরী নদীর সতীঘাট, দ্বারকেশ্বর নদের এক্তেশ্বর, রাজগ্রাম, মিনাপুর ঘাট এলাকায় গিয়ে দেদার বালি খননের চিত্র লক্ষ্য করা যায়। ওইসব এলাকায় ১৪ নম্বর জাতীয় সড়কের দু’টি এবং বাঁকুড়া-খাতড়া ও বাঁকুড়া-দুর্গাপুর রাজ্য সড়কের দু’টি গুরুত্বপূর্ণ সেতু রয়েছে। মাফিয়া মদতপুষ্ট লোকজনকে ওইসব সেতু সংলগ্ন এলাকা থেকে লাগাতার বালি তুলতে দেখা যায়। দ্বারকেশ্বর নদের জলস্তর কিছুটা বেশি থাকায় ছাঁকনি ও অন্যান্য যন্ত্রের সাহায্যে বালি তোলা হচ্ছে। রুখাশুখা গন্ধেশ্বরীর চর এলাকা থেকে বালি তুলতে অবশ্য পাচারকারীদের কোনও বেগ পেতে হয়নি। এভাবে বালি তোলার ফলে গুরুত্বপূর্ণ ওই সেতুগুলির মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন। তাঁদের মতে, সেতু সংলগ্ন এলাকা থেকে বালি তোলার ফলে গভীর গর্তের সৃষ্টি হয়। নদীর জল বাড়লে সেতুর স্তম্ভ বা পিলারের গোড়ার নুড়ি, পাথর, বালি স্রোতের টানে ওই গর্তের দিকে সরে যাবে। তার ফলে সেতুর পিলার বসে যাওয়া বা ভেঙে পড়ার আশঙ্কা থাকবে।
জেলা ভূমিদপ্তরের এক আধিকারিক বলেন, বেআইনি বালি উত্তোলনের ফলে সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কোনও কারণে সেতুগুলির ক্ষয়ক্ষতি হলে আমাদের দায়ী করা হবে। বাঁকুড়া শহরের চারপাশে দিনের পর দিন ওই ধরনের ঘটনা ঘটলেও পুলিস বা ব্লক ভূমিদপ্তরের আধিকারিকরা কেন ব্যবস্থা নেননি, তা তদন্ত করে দেখা হবে।
বাঁকুড়া সদর থানার এক আধিকারিক বলেন, বেআইনি বালি পাচারের অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখা হবে। আমাদের থানা এলাকায় কোনও বেআইনি খাদান নেই।