• বছর ফেরে কখনও চন্দননগর, কখনও দমদমে পুজো পান উমা
    বর্তমান | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • বিশ্বজিৎ মাইতি, বরানগর: চন্দননগরের হাটখোলার বাসিন্দা অমৃতলাল সেন। তখন দমদম ক্যান্টনমেন্ট ইংরেজ সেনাদের অন্যতম মূল ঘাঁটি। ব্যবসায়িক প্রয়োজনে অমৃতলালকে প্রায়শই দমদমে আসতে হতো। একসময় পাকাপাকিভাবে দমদমে এসে বসবাস শুরু করেন। একদিন তাঁর স্বপ্নে এলেন দুর্গা। সে রূপ দেখে মোহিত অমৃতলাল ১৯১৪ সালে দুর্গাপুজোর সূচনা করলেন দমদমে। পরবর্তী সময় সেন বংশের সন্তান উপেন্দ্রনাথ দমদম ছেড়ে ফিরে গেলেন চন্দননগর। তারপর দুর্গাপুজো করা নিয়ে দমদম ও চন্দননগরে থাকা সদস্যদের মধ্যে শুরু হল তীব্র টানাপোড়েন। দুর্গার নামে বিস্তর বিষয়সম্পত্তি রয়েছে। সবমিলিয়ে শুরু হয় অস্থিরতা। তারপর বহু আলোচনা শেষে স্থির হয়, বিজোড় বছর চন্দননগরে ও জোড় বছর দমদমের সেনবাড়িতে হবে দুর্গার পুজো। যাঁরা যে বছর পুজো করবেন তাঁরাই ঠাকুরের সম্পত্তি থেকে আয়ের টাকা পাবেন। 


    সেনবাড়ির দুর্গা শিবের কোলে বসেন। চারপাশে থাকেন তাঁদের ছেলেমেয়েরা। সপরিবার উপস্থিতি। সবার মুখে স্মিত হাসি। পদতলে থাকে ছোট একটি মহিষ। দেবীর অভয়া মূর্তি। ১১৪ বছর ধরে পুজো হচ্ছে দমদম ক্যান্টনমেন্ট লাগোয়া সেনবাড়িতে। দুর্গার ভোগ নিরামিষ। তবে দশমীতে মাছভাত খেয়ে বিসর্জনের আগে ঠাকুর বরণ করেন গৃহবধূরা। কয়েক দশক ধরে সেনবাড়ির দুর্গা বছর ফেরে গঙ্গার দু’পাড়ে পুজো পান। জাগ্রত ঠাকুরের কাছে মানত করার পর তা পূরণ হওয়ার আনন্দে ধুনো জ্বালান বহু ভক্ত। বৈষ্ণব মতে পুজো হয়। থাকে নৈবিদ্য ও শীতল ভোগ। ভোগে লুচি, সুজি, মিষ্টান্ন সহ নানা ধরনের ফল থাকে। নৈবিদ্যর বৈচিত্র চোখে পড়ার মতো। সপ্তমীতে ২৬টি থালায় সাজানো হয়। অষ্টমীতে ২৪ থালা ও নবমীতে ১০ কেজি চাল দিয়ে থালা সাজানো হয়। অষ্টমীতে হয় কুমারী পুজো। এ পুজোয় ধুনো জ্বালানোর রীতি বেশ জনপ্রিয়। আশপাশের বহু মানুষ ধুনো পোড়াতে আসেন। সেনবাড়ির কুললক্ষ্মীকে সপ্তমীর দিন আনা হয় দুর্গা দালানে। দুর্গার সঙ্গে পুজো হয় লক্ষ্মীর। এই পরিবারের সদস্য প্রণতি সেন বলেন, ‘আগের নিয়ম ও রীতি আজও বর্তমান। চতুর্থী থেকেই নিরামিষ শুরু। দশমীতে মাছভাত খেয়ে ঠাকুর বরণ করে বিসর্জন হয়।’ এখনও অতীতের কথা উঠলে বর্তমান প্রজন্ম তপন সেনের চোখমুখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। তিনি বলেন, ‘আগে ভিয়েন বসত বাড়িতে। আত্মীয়স্বজনে গমগম করত। ইংরেজ জমানায় এই বাড়ির একজন আলিপুর কোর্টের ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন। দমদম পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যানও ছিলেন একজন। কত নামকরা মানুষ পুজোয় এসেছেন। এখন আর্থিক স্বচ্ছলতা থাকলেও লোকবল কমেছে। বাড়ি ফাঁকাই থাকে। এক বছর ছাড়া পুজোর এই নিয়ম বহুবার বদলের কথা ভাবা হলেও কোনও না কোনও কারণে তা আটকে গিয়েছে। মা চান না হয়ত। আমাদের মা ভীষণ জাগ্রত। তিনিই আমাদের বরাভয় দাত্রী। বহুবার বহুরূপে তিনি দেখা দিয়েছেন।’
  • Link to this news (বর্তমান)