• কেষ্ট-দুয়ারে ব্রাত্য চন্দ্রনাথ ও বিকাশ
    বর্তমান | ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • সৌম্যদীপ ঘোষ, বোলপুর: প্রায় ২ বছর পর বোলপুরে পা রাখলেন। যেদিন সিবিআই তাঁকে নিচুপট্টির বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল সেদিন তাঁকে শুনতে হয়েছিল অনেক বিদ্রূপ, অনেক কটাক্ষ। মঙ্গলবার তাঁর প্রত্যাবর্তনের দিনেও বাড়ির সামনে প্রচুর ভিড়। তবে এদিন শুধুই আবেগ আর উচ্ছ্বাস। দলীয় কর্মী ও বোলপুরবাসীর আবেগ ও উচ্ছ্বাসে ভেসে বোলপুরের বাড়িতে ঢুকলেন অনুব্রত মণ্ডল ও তাঁর মেয়ে সুকন্যা। এদিন তিনি দলীয় কর্মীদের উদ্দেশে হাত নাড়লেও মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ ও সিউড়ির বিধায়ক বিকাশ রায়চৌধুরীর সঙ্গে দেখা করলেন না। এই দুই হেভিওয়েট নেতা বাড়ির দরজায় গিয়ে হাত নেড়ে ফিরে আসলেন। তা নিয়ে শুরু হয়েছে জোর চর্চা। যদি তৃণমূল নেতৃত্ব জানিয়েছে, অনুব্রতবাবু ক্লান্ত থাকায় তেমন কারও সঙ্গে দেখা করেননি। 


    মঙ্গলবার সাদা রঙের চারচাকা গাড়িতে চেপে বোলপুরের নিচুপট্টির বাড়ি ঢুকলেন কেষ্ট মণ্ডল। রাস্তার দু›ধারে তখন লোকে লোকারণ্য। ভিড় ঠেলে বাড়িতে ঢুকলেন কেষ্ট ও তাঁর মেয়ে সুকন্যা। বেলা ১০ টায়  বাড়ির নীচতলায় কাঠের চেয়ারে এসে বসলেন ‘বীরভূমের বাঘ’। পরণে সাদা পাঞ্জাবি, পায়ে সাদা জুতো। চেয়ারে বসে মাঝেমধ্যেই হাত নাড়ছিলেন দলীয় কর্মী সমর্থকদের দিকে। কর্মীদের আবেগ দেখে কেঁদে ফেললেন অনুব্রত। তারপর ডেকে নিলেন বাছাই করা কয়েকজন নেতাকে। ডাক পেলেন কারা? যাঁরা তাঁর অনুপস্থিতিতে দলে ছিলেন কোণঠাসা। পাশের চেয়ারে তখন বোলপুরের গগন সরকার, নলহাটির বিধায়ক রাজু সিং। সর্বক্ষণ দাঁড়িয়ে কোর কমিটির সদস্য সুদীপ্ত ঘোষ। সঙ্গীদের কথা জানতে চাইলেন।


    একদা ছায়াসঙ্গী মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ, বিধায়ক বিকাশ রায়চৌধুরী তাঁর সঙ্গে দেখা করতে যান। কিন্তু ব্যর্থ হলেন। প্রশ্ন উঠেছে, জেলে থাকার সময় কোনও সম্পর্ক না রাখাই কি এই ‘উপেক্ষা’র কারণ? এই দুই নেতা ছাড়াও অনেকে দরজা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে দেখা করতে চান। অনুব্রত জানিয়ে দেন, ‘সব পার্টি অফিসে কথা হবে, এখানে নয়’। দীর্ঘ অপেক্ষার পর রাজনগরের ব্লক সভাপতি সুকুমার সাধু ঢোকার সুযোগ পান। কিন্তু জেলার দুই হেভিওয়েট নেতা ‘চাঁদু’ ও বিকাশকে ঢুকতে না দেওয়ায় হতবাক দলের অনেকে। এরপর জেলার আর কোনও নেতা সেভাবে দেখা করতে যাননি। অনেকের দেখা করার ইচ্ছা থাকলেও মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক বৈঠকের পর গাড়ি ঘুরিয়ে নিয়েছেন। তাতেই উঠেছে প্রশ্ন, কেষ্টর প্রত্যাবর্ত্যনে জেলার রাজনীতির জল কোনদিকে গড়াবে? 


    বাড়িতে ঢোকার মুখে এদিন তিনি বলেন, ‘চেনা পথ দিয়ে বাড়ি এসে ভালো লাগছে। পায়ে একটু ব্যাথা। আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ভালোবাসি। গোটা দেশ ভালোবাসে।’ মুখ্যমন্ত্রী বোলপুরে বৈঠক করলেও তাঁর সঙ্গে বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতির দেখা হল না। তবে, জেলা নেতারা সকলেই অনুব্রতকে নিয়ে মন্তব্যের ব্যাপারে ছিলেন খুব সতর্ক। অনুব্রত বিরোধী হিসাবে পরিচিত কাজল শেখ বলেন, ওঁর সঙ্গে দেখা করতে ও ওঁকে প্রণাম করতে বাড়িতে যাব। উনি অনেক জার্নি করে এসেছেন, একটু বিশ্রাম নিন। বিধায়ক বিকাশ বলেন, অভিভাবক ফেরায় আমরা খুশি। কিছুটা অসুস্থ উনি। আর কেষ্ট জানিয়েছেন, ‘অপেক্ষা করো, পার্টি অফিসে আসছি।’
  • Link to this news (বর্তমান)