নিজস্ব প্রতিনিধি, বর্ধমান: জেলযাত্রার আগে মঙ্গলকোট, কেতুগ্রাম এবং আউশগ্রামের সংগঠনের রাশ ছিল অনুব্রত মণ্ডলের হাতে। পঞ্চায়েত বা বিধানসভা নির্বাচনে টিকিটের তালিকা তিনিই তৈরি করতেন। তাঁর সাংগঠনিক দাপটে বিরোধীরা কার্যত উবে গিয়েছে। শ্রীঘরে যাওয়ার পর এই তিন বিধানসভা কেন্দ্রের সংগঠন দেখার ভার পূর্ব বর্ধমানের জেলা নেতাদের উপর দেওয়া হয়। রাতারাতি অনুব্রত মণ্ডল ঘনিষ্ঠ নেতারা শিবির বদল করতে থাকেন। আউশগ্রাম বা মঙ্গলকোটের যেসব নেতা একসময় সকাল-সন্ধ্যা ‘কেষ্টনাম’ জপ করতেন তাঁরা অন্য ‘দাদা’র নামে জয়ধ্বনি দিতে থাকেন। অনুব্রত বীরভূমে ফেরার পর তাঁরা অবশ্য আর ঝুঁকি নিতে চাননি। মঙ্গলবার সকাল থেকে নিজেদের মঙ্গল কামনায় তাঁরা বোলপুর রওনা দেন। ‘দাদা তোমার পাশে আছি’, ‘টাইগার কামব্যাক’ জাতীয় বিভিন্ন ধরনের জয়ধ্বনিতে তাঁরা সোশ্যাল মিডিয়া ভরিয়ে দেন। মঙ্গলকোট, কেতুগ্রাম এবং আউশগ্রামের সংগঠন ফের কি বোলপুর থেকে পরিচালনা করা হবে? এই প্রশ্ন কয়েকদিন থেকে জেলাজুড়ে ঘুরতে থাকে।
তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, এদিন সকাল থেকে ওই তিন বিধানসভা কেন্দ্রের অনেকেই বীরভূমের উদ্দেশে রওনা দিলেও কেষ্টর দর্শন পাননি। তবে বোলপুর যাওয়ার পথে তাঁর কনভয় কিছুক্ষণের জন্য গুসকরায় দাঁড়ায়। সেখানকার কয়েকজন নেতা তাঁর সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পান। তাঁর নামে জয়ধ্বনি দিতে থাকেন। দলের এক এক নেতা বলেন, এক সময়ের সিপিএমের দুর্গ পূর্ব বর্ধমানের ওই তিন বিধানসভা কেন্দ্রে সবুজ গড় তৈরির পিছনে বীরভূমের জেলা সভাপতি অবদান রয়েছে। ওই এলাকার সংগঠন তাঁর হাতের তালুর মধ্যে রয়েছে। তাই ফের মঙ্গলকোট, কেতুগ্রাম বা আউশগ্রাম তাঁর শাসনে গেলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। অনুব্রতবাবু জেলে যাওয়ার পর সংগঠনে অস্থিরতা তৈরি হয়। সেই কারণেই ওই তিন বিধানসভা কেন্দ্রের ভার বর্ধমানের নেতাদের উপর দেওয়া হয়।
অনুব্রত ফিরে আসায় ফের ওই তিন বিধানসভা কেন্দ্রের সংগঠনের ভার তাঁর হাতে যাবে কিনা তা নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি। কিন্তু সংগঠনে চর্চা শুরু হয়েছে। দলের অন্য গোষ্ঠীর দাবি, লোকসভা নির্বাচনে ওই তিন বিধানসভা কেন্দ্র থেকে বিপুল ভোটে লিড পাওয়া গিয়েছে। আগের নির্বাচনের থেকেও এবার বেশি ভোট পেয়েছে তৃণমূল। তিন কেন্দ্রের সংগঠনের নিয়ন্ত্রণ বর্ধমানের নেতাদের হাতে রয়েছে। তাই ক্ষমতা হস্তান্তরের কারণ নেই।
পূর্ব বর্ধমান জেলার তৃণমূল নেতা দেবু টুডু বলেন, এবিষয়ে কিছু জানা নেই। দলের এক নেতা বলেন, অনুব্রতবাবু ফিরে আসায় ওই তিন বিধানসভা কেন্দ্রের কয়েকজন নেতার ঘুম ছুটে গিয়েছে। কাছের মানুষ প্রমাণ করার জন্য তারাই বোলপুরে বেশি করে ছোটাছুটি শুরু করেছেন। আবার কেউ কেউ নতুন করে ‘প্রাণ’ পেয়েছেন। তাঁরা ভালোই জানেন, আউশগ্রাম, মঙ্গলকোট বা কেতুগ্রামে নজর থাকবে অনুব্রতবাবুর।